খুলছে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু, উচ্ছ্বসিত দুই পারের বাসিন্দারা

উদ্বোধনের অপেক্ষায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সেতুটি চালু হলে নারায়ণগঞ্জ বন্দর এলাকায় যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলাকে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। নদী পার হয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দরে যাতায়াত করেন। দুই পারের যোগাযোগ সহজ করতে বহু বছর ধরেই শীতলক্ষ্যার ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি করেছিলেন দুই পারের বাসিন্দারা। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। খুলতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু।

আগামীকাল সোমবার দুপুর ১২টায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তা নিয়েই উচ্ছ্বসিত নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। একদিকে সেতুটির উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে, অন্যদিকে অনেকেই সেতুটি দেখতে ভিড় করছেন।

১ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের নামে। ইতিমধ্যে ‘নাসিম ওসমান সেতু’ নাম দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ।

সেতুটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্থলপথে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা। সেতুটি ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সহজেই শহরে আসতে পারবেন। অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ওপর চাপ কমিয়ে নিতাইগঞ্জ পাইকারি বাজারের ট্রাকগুলো নদী পার হয়ে চট্টগ্রামে যাতায়াত করতে পারবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন, ২২ দশমিক ১৫ মিটার প্রশস্ততার ছয় লেনের এই সেতুতে ধীরগতির গাড়ি (রিকশা-সাইকেল) চলাচলের জন্য আলাদা দুটি লেন রাখা হয়েছে। হেঁটে পারাপারের জন্য ফুটপাতও আছে। সেতুটি নারায়ণগঞ্জবাসীর উপকারের পাশাপাশি ঢাকা শহরের যানজট নিরসনেও কাজ করবে। সেতুটি খুলে দেওয়ার পর দেশের তিনটি জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। সেতুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমাবে অন্তত ৯ কিলোমিটার।

সেতু মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালের নভেম্বরে সদর উপজেলার সৈয়দপুর থেকে বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সওজ। প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও পরামর্শক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে প্রায় ছয় বছর সময় চলে যায়। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘসূত্রতায় সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি সরকার ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণসহায়তা দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড সেতুটি নির্মাণ করে। 

উদ্বোধনের অপেক্ষায় বহুল প্রতীক্ষিত তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। আগামীকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি সেতুটির উদ্বোধন করবেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতু দেখতে আশপাশের বাসিন্দারা সেতুর দুই পাশে ভিড় করছেন। তাঁদের কেউ কেউ নতুন সেতুর সামনের সড়কে ছবি তুলছেন। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বন্দর ও সদর উপজেলার মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীতে অন্তত ১৩টি খেয়াঘাট আছে। প্রতিদিন লাখো মানুষ ঘাটগুলো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হন। নতুন সেতু তাঁদের সেই ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

আবিদ হাসান নামের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বন্দর ও শহরের মধ্যে একটি সংযোগ সেতু আমরা চেয়েছিলাম। সেটি হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত। এই সেতু আমাদের জীবনে কতটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

পোশাকশ্রমিক আকলিমা আক্তার বলেন, ‘সেতু দেখতে আইছি। কিন্তু শহর থেইকা দূরে হওয়ায় এই সেতু আমাগো খুব একটা কাজে লাগব না। আগের মতোই বন্দর ফেরিঘাট দিয়া রিস্ক নিয়া আমাগো নদী পার হইতে হইব।’

সেতুর পূর্ব পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আহমেদ বলেন, উদ্বোধনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। পাঁচ হাজার মানুষের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলাকে উত্তর-দক্ষিণে ভাগ করেছে শীতলক্ষ্যা নদী। সেতুটি চালু হলে দুই উপজেলার বাসিন্দাদের যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ  বলেন, সেতুর পূর্ব পাড়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, সিটি মেয়র, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানস্থলে এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটির উদ্বোধন করবেন।