ইন্দোনেশিয়ার ফুটবলের জন্য কালো দিন

ইন্দোনেশিয়ার মালাং শহরের স্টেডিয়ামে আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে | ছবি: এএফপি

এএফপি, জাকার্তা পোস্ট: ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশে ফুটবল স্টেডিয়ামে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনায় পদদলিত হয়ে অন্তত ১২৫ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৮০ জন। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলের মালাং শহরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা ফুটবলের ইতিহাসে ‘অন্যতম ট্র্যাজেডি’ হয়ে রইবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।  

মালাং শহরের কানজুরুহান ফুটবল স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে আরেমা এফসি ও পেরসেবায়া সুরাবায়া নামের দুটি ক্লাবের মধ্যে খেলা ছিল। খেলায় আরেমাকে ৩–২ গোলে হারায় পেরসেবায়া। ক্লাব দুটি দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত। গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে পেরসেবায়ার কাছে এই প্রথম কোনো ম্যাচে হেরেছে আরেমা।

ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, খেলায় হেরে যাওয়ার পরে আরেমার দর্শকেরা মাঠে নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তাঁদের থামাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এতে দর্শকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অনেকেই পদদলিত হন।

এ ঘটনাকে ‘দাঙ্গা’ বলে উল্লেখ করেছে ইন্দোনেশিয়া পুলিশ। আজ রোববার এক বিবৃতিতে পূর্ব জাভা পুলিশের প্রধান নিকো আফিন্তা জানান, এ ঘটনায় ১২৫ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। স্টেডিয়ামের ভেতরে ৩২ জন মারা গেছেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর বাকিদের মৃত্যু হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যদিও আজ দুপুর নাগাদ ইন্দোনেশিয়া সরকারের বরাতে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে সংঘর্ষের ঘটনায় পদদলিত হয়ে ১৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পরে সংশোধন করে সংখ্যাটি কমিয়ে আনা হয়। এ বিষয়ে পূর্ব জাভা প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর এমিল দারদাক এএফপিকে বলেন, কয়েকজনের মরদেহ ভুলবশত একাধিকবার গোনা হয়েছিল। তাই নিহতের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। পরে স্থানীয় ১০টি হাসপাতাল থেকে নেওয়া তথ্য যাচাই–বাছাইয়ের পর তা সংশোধন করা হয়েছে।

ঘটনার সময় ওই স্টেডিয়ামে ছিলেন ৪৩ বছর বয়সী দোনি। তিনি বলেন, পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পর সবাই দ্রুত স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর চেষ্টা করেন। এতে সরু প্রবেশপথগুলোয় হুড়োহুড়ি লেগে যায়। সবাই ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। এতে অনেকেই পদদলিত হয়ে প্রাণ হারান। তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ বলছে, দাঙ্গা হয়েছে।

কিন্তু সেখানে কোথাও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ হঠাৎ কাঁদানে গ্যাস না ছুড়লে এমন হুড়োহুড়ি হতো না। তারা সেখানে থাকা নারী ও শিশুদের কথা একবারও ভাবেনি।’

বন্ধুদের নিয়ে খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ২২ বছরের যুবক স্যাম গিলাং। তাঁর তিন বন্ধু পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এএফপিকে স্যাম বলেন, ‘সবাই বের হওয়ার জন্য গেটের দিকে ছুটছিল। একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছিল। এ সময় অনেকেই মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে আমার চোখ জ্বলছিল। কোনোরকমে বেড়া ডিঙিয়ে বেরিয়ে আসতে পারায় প্রাণে বেঁচে গেছি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, স্টেডিয়ামের বাইরে পুলিশের ব্যবহৃত যানবাহনসহ ১৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িগুলো তখনো সেখানে পড়ে রয়েছে। দাঙ্গা পুলিশের দল পুরো এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় টহল দিচ্ছেন।

এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। দেশটির ক্রীড়া ও যুবমন্ত্রী জাইনুদিন আমালি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘দুঃখজনক এ ঘটনা এমন একটা সময়ে ঘটল, যখন ফুটবলের ভক্ত–অনুরাগীরা স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।’

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো গতকাল বলেন, ‘আমি এ ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটাই যেন ইন্দোনেশিয়ায় সর্বশেষ ফুটবল ট্র্যাজেডি হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট উইদোদো ভবিষ্যতে ফুটবল ম্যাচগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পুনর্মূল্যায়নের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশটির সকার অ্যাসোসিয়েশনকে তিনি বলেছেন, তারা যেন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লিগ ওয়ান ম্যাচগুলো স্থগিত রাখে।

পুরো ঘটনাটির নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আগামী বছরের মে মাসে ইন্দোনেশিয়ায় অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে দেশটির ফুটবলের ইতিহাসে এমন কালো দিনে শোক জানিয়েছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনসহ পুরো ফুটবল–বিশ্ব।