শরতের গানে গানে প্রকৃতির বন্দনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছায়ানট আয়োজন করে শরতের অনুষ্ঠান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বকুলতলা সাজানো হয়েছিল কাশফুলে। তরুণ-তরুণীরা সেজেছিলেন ইচ্ছামতো। শরৎ উৎসবের সজ্জা যেন কেবল স্নিগ্ধতা, যা আজ শুক্রবার ভোরে গিয়ে দেখা গেল চারুকলার বকুলতলায়।

আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছায়ানট আয়োজন করে শরতের অনুষ্ঠান। মধ্য আশ্বিনে শরৎকে উদ্‌যাপন করতে তাঁরা কণ্ঠে তুলে নেন গান। সম্মেলক স্বরে গেয়ে ওঠেন—‘ওগো শেফালী-বনের মনের কামনা’, কখনো ‘আমরা বেঁধেছি কালের গুচ্ছ’, আবার কখনো ‘তোমার মোহন রূপে কে রয় ভুলে’। শরতের গানে গানে প্রকৃতির বন্দনায় শামিল হন তাঁরা।

মহামারির দুটি বছর পর আবারও মুক্তমঞ্চে শিল্পীদের নিয়ে বের হলো সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। শঙ্কা কাটিয়ে আবার প্রাণের মিলনের জন্য তাঁরা বেছে নিলেন শরৎকে। আর সেই সুবাদে শিল্পী, সংগীত অনুরাগী আর প্রকৃতিপ্রেমীদের মিলন ক্ষেত্রে পরিণত হয় চারুকলা। শরৎ বন্দনায় শিল্পীরা গেয়ে শোনান গান। দীপ্র নিশান্ত শোনান ‘শরৎ আলোর কমলবনে’, নাঈমা ইসলাম ‘আমার রাত পোহালো শারদ প্রাতে’, অসীম দত্ত ‘তুমি উষার সোনার বিন্দু’, অভয়া দত্ত শোনান ‘তোমার সোনার থালায় সাজাবো আজ’।

হাতে কাশফুলের গুচ্ছ, কানে কাঁঠালচাঁপা। শরতের বন্দনায় সেজেছেন এক তরুণী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ আয়োজনে আরও ছিল সম্মেলক নৃত্য ও আবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিচিত্র’ প্রবন্ধ থেকে পাঠ করেন জাহিদ রেজা নূর। সুমনা বিশ্বাস শোনান রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘শরৎ’। একক কণ্ঠে সেমন্তী মঞ্জরী শোনান ‘আজি মেঘ কেটে গেছে’, এ টি এম জাহাঙ্গীর শোনান ‘আমি চাহিতে এসেছি শুধু একখানি’, তাহমিদ ওয়াসীফ ‘কেন যে মন ভোলে আমার’, সুতপা সাহা ‘কার বাঁশি নিশিভোরে’, সেঁজুতি বড়ুয়া ‘আমরা নয়ন ভুলানো এলে’, মাকসুরা আখতার শোনান ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে’ গানগুলো।

শরতের গানে গানে প্রকৃতির বন্দনায় শামিল হন শিল্পীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

মহুয়া মঞ্জরীর একক কণ্ঠে ‘তোমরা যা বল তাই বল’ গানে নাচ করেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা। ছায়ানটের জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের একটি দল নাচ করে ‘দেখো দেখো শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ গানের সঙ্গে। এ আয়োজন প্রসঙ্গে ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, ‘করোনাকালের কারাবন্দী সময় পার হয়ে আমরা আবারও মিলতে শুরু করেছি। সবাই জানেন, ছায়ানট পয়লা বৈশাখের পাশাপাশি বর্ষামঙ্গল, শরতের অনুষ্ঠানও আয়োজন করে। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে একত্রিত করার আয়োজন এই প্রকৃতি পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলো। আজকের বাংলাদেশে এই অনুষ্ঠানগুলোর বিশেষ গুরুত্ব আছে। আমার ধর্ম যা-ই হোক, আমরা এই প্রকৃতির সন্তান, সবার সঙ্গে মিলে চলার মে ব্যাপার এসব বিষয় আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই।