এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন সৌদিআরবে বাবার মৃত্যুর খবর পায় পারভেজ আলম | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি নাটোর: এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের দিন পারভেজ আলম জানতে পারে, সৌদি আরবে তার বাবা মারা গেছেন। বাবা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরদিন পরীক্ষা দিতে বসে পারভেজ। পরীক্ষা শেষ হতে চলেছে। কিন্তু বাবার লাশ এখনো দেশে আসেনি। সৌদি আরবের এক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে তার বাবার লাশ। কবে লাশ দেশে আসবে, তা–ও জানেন না প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
পারভেজ আলম নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার মালিপাড়া গ্রামের হারুণ অর রশিদের ছেলে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হারুণ ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে প্রবাসী। গত ২৫ আগস্ট সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে বলেন, ‘ইয়োর ফাদার ইজ লস্ট।’ এরপরই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। অনেক চেষ্টার পরও বাবার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি তার পরিবার।
সৌদি আরবে অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন হারুণ অর রশিদ | ছবি: সংগৃহীত |
বৃহস্পতিবার পারভেজ বলে , ১৩ সেপ্টেম্বর অনলাইনে তাঁর বাবাকে নিয়ে ‘সৌদি থেকে ফোনে শুধু বলেছেন, “ইয়োর ফাদার ইজ লস্ট”’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই দিনই নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের দাম্মাম প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর বরাত দিয়ে জেলা প্রশাসক পারভেজ আলমকে জানান, তার বাবা মারা গেছেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত। সেখানকার আবকিক থানা সূত্রে জানা গেছে, হারুণ অগ্নি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তাঁর শরীরের বেশির ভাগ পুড়ে গেছে। লাশ ওই অবস্থায় আবকিক জেনারেল হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হওয়ায় ফাইল ব্যুরো অন ইনভেস্টিগেশন অফিসে আছে। থানায় ফাইল পৌঁছালে লাশ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকগ্রস্ত। এখন তাঁদের একমাত্র চাওয়া, হারুণের লাশটা দেশে আসুক।
পারভেজ আলম বলে, ‘আমরা শুরুতে বাবার ফোন বন্ধ পাই। পরে অচেনা নম্বর থেকে বাবার মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনাটি আমরা সংবাদমাধ্যমকে জানাই। প্রথম আলোতে খবর প্রকাশের দিনই জেলা প্রশাসক বাবার খোঁজখবর নেন। তিনি ফোন করে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আমরা তাঁর কাছে বাবার লাশ ফেরতের জন্য আকুতি জানিয়েছি। তিনি চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।’
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়ায় সেখানকার আইন অনুসারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা লাশ ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারছে না। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে লাশ ফেরত পাঠানো হবে।