বগুড়া সদরের ইউএনও সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ২ ভাইস চেয়ারম্যান ও ১১ জন ইউপি চেয়ারম্যান লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সোমবার বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়া সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে এবার। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ২ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা যৌথভাবে আজ সোমবার বগুড়ার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। ইউএনওর প্রতি অনাস্থা এনে সরকারি সভা ও অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন তাঁরা।

অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, সদর উপজেলার চেয়ারম্যানরা এসে ইউএনওর প্রত্যাহার চেয়ে লিখিত চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন। এটি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউএনও সমর কুমার পাল সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই পরিষদের সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করছেন। সময়মতো অফিসে না এসে সরকারি সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত অফিস খোলা রেখে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকতে বাধ্য করেন। অফিস সময় ছাড়াও বিনা প্রয়োজনে চেয়ারম্যানদের কার্যালয়ে ডেকে এনে হেনস্তা করেন। দরকারি ফাইল দিনের পর দিন আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেন। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ইউএনও এলজিইডি কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর শেখকে অফিসে ডেকে নিয়ে বেদম মারপিট করেন। ন্যক্কারজনক এ ঘটনা আড়াল করতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জড়িয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেন।

সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারি অফিসসূচি সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত হলেও ইউএনও সময়মতো অফিসে আসেন না। আবার গভীর রাত পর্যন্ত অফিস খুলে রেখে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন। সর্বশেষ এলজিইডির কর্মচারী আলমগীরের ওপর মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছেন। তাঁকে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার কারণে ইউএনও ফেসবুকে আমাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য পোস্ট করেছেন। এই ইউএনওর কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাঁকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সব রকমের সভা ও সরকারি অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে ইউএনও সমর কুমার পাল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, সবই ভিত্তিহীন। কারও সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করার অভিযোগও সঠিক নয়। এলজিইডির কর্মচারী আলমগীরকে মারপিটের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

তবে সরকারি নির্দেশনার বাইরে রাত পর্যন্ত অফিসের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কথা স্বীকার করেন ইউএনও সমর কুমার পাল। তিনি বলেন, সরকারি নানা কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার জন্য চাপ থাকে। এ কারণে অফিস সময়ের বাইরেও দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। দাপ্তরিক কাজ সারতে গেলে কর্মকর্তা–কর্মচারী ছাড়া সম্ভব নয়। এ কারণে তাঁদেরও আমার সঙ্গে অফিসে কাজ করতে হয়।

এদিকে ইউএনওর বিরুদ্ধে এলজিইডির কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ তদন্তে গত শুক্রবার তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সালাহউদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে গঠিত কমিটি আজ সদর উপজেলা পরিষদে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেন।

এ ব্যাপারে বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর শেখের মেয়ে লোপা খাতুন অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাবা ডিউটিতে গেলে তাঁকে আটকে রেখে ইউএনও মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেন। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসে তাঁর গাড়িতে করে বাবাকে নিয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। চাপে পড়ে পরদিন অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে সিরাজগঞ্জে চলে আসেন তিনি।