ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের সংবাদ সম্মেলন। ২৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকা | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবেদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: বহিষ্কারাদেশের পেছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাংশের ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ক্যাম্পাসে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কৃত সংগঠনের ইডেন কলেজ শাখার ১২ জন নেত্রী। বহিষ্কারাদেশকে তাঁরা ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন। অবিলম্বে এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও ‘সুষ্ঠু বিচারের’ দাবিতে আমরণ অনশনে যাচ্ছেন বহিষ্কৃত নেত্রীরা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাঁরা অনশন করবেন।

আজ সোমবার দুপুরে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বহিষ্কৃত নেত্রীর। ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে গত দুদিন উত্তপ্ত ছিল ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস। দুই পক্ষের সংঘর্ষে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ওরফে রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাসহ অম্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে ইডেন কলেজ কমিটি স্থগিত ও ১৬ নেতা-কর্মীকে (১২ নেত্রী ও ৪ কর্মী) স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ৷

বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় আজ দুপুরে ‘বিনা তদন্তে বহিষ্কার, নেপথ্যে কারা’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বহিষ্কৃতরা। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার ওরফে বৈশাখী। বক্তব্যের প্রথম অংশ পড়ে শোনান সুস্মিতা৷ এতে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে বহিষ্কার বিষয়টি আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়৷ নির্যাতিত সহযোদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর অপরাধে আজকে আমাদের স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে৷ ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ও হাজার হাজার প্রমাণ আছে৷ তাঁদের চাঁদাবাজির ভিডিও, ইডেন কলেজের অধ্যক্ষকে নিয়ে কটূক্তিসহ বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেন বহিষ্কার করা হলো না৷ কোন তদন্তের ভিত্তিতে আমাদের ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো?

লিখিত বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশ পড়ে শোনান সামিয়া আক্তার৷ এতে বলা হয়, দুই পক্ষের সংঘর্ষে শুধু একটা পক্ষকে কেন গণহারে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো? ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটে কোনো সমস্যা হলে তার তদন্ত বা সমাধানের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়৷ আমাদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম না মেনে কেন সরাসরি স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো? সংবাদ সম্মেলনে আমরা ২১ জন নেত্রী উপস্থিত ছিলাম৷ সেখান থেকে ১২ জনকে কেন বহিষ্কার করা হলো? আমাদের বহিষ্কারাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে৷ আমাদের একামাত্র অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি৷ যদি এই ভিত্তিহীন বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা না হয়, আমরা সবাই এর সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন করব৷

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুস্মিতা বাড়ৈ বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একাংশ ষড়যন্ত্রের (বহিষ্কার) সঙ্গে সরাসরি জড়িত৷ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নিয়ম আছে যে কমিটির অধিকাংশ মানুষ যদি একসঙ্গে বহিষ্কার হয় বা গণহারে পদত্যাগ করে, সেক্ষেত্রে কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ একাংশকে বহিষ্কার করলে কমিটিটাও থাকল, আবার বহিষ্কারও করা গেল৷ তথ্যপ্রমাণ নেই৷ কিন্তু এমন বিষয় আমাদের কানেও বারবার আসে যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তাঁদের (তামান্না ও রাজিয়া) মেয়েরা নাকি কাজ নিয়ে আসে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে...৷

সংবাদ সম্মেলন শেষে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে রওনা হন বহিষ্কৃত ১২ নেত্রী৷ বহিষ্কৃত এক সহসভাপতি বলেন, ‘পার্টি অফিসের ভেতরে আমরা আমরণ অনশন করব৷ বহিষ্কৃত ১২ জন নেত্রী এতে অংশ নেবেন৷ অন্য যে ৪ জনকে কর্মী বলে বহিষ্কার করা হয়েছে, এমন নামের কোনো ছাত্রলীগ কর্মী ইডেন কলেজে নেই৷ ফলে বহিষ্কৃত সবাই অনশনে অংশ নিচ্ছেন- এটি বলাই যায়।’