ছিনতাই হওয়া মালামাল ভর্তি চারটি ট্রাক পাবনা সদর থানা পুলিশ উদ্ধার করে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি পাবনা ও ঈশ্বরদী: রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশে লোহা চোর চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যেই ট্রাকভর্তি লোহা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রূপপুর থেকে লোহাবোঝাই ছয়টি ট্রাক নারায়ণগঞ্জের পাগলার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে দুই ট্রাক লোহা পাবনার মধ্যে ছিনতাই হয়। এখনো ওই দুই ট্রাক লোহা উদ্ধার বা জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নীরব অ্যালুমিনিয়াম স্টোরের পক্ষে তাঁর প্রতিনিধি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ নামে এক ব্যবসায়ী ঈশ্বরদী থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, মেসার্স নীরব অ্যালুমনিয়াম স্টোর গত ১৩ সেপ্টেম্বর রূপপুর পারমাণবিকের নিকিমট-অটোমস্ট্রয়-জেএসসির কাছ থেকে ৩৫০ মেট্রিক টন লোহার স্ক্যাপ ক্রয় করেন। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে তার প্রতিনিধি আব্দুল হামিদ গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৬টি ট্রাকযোগে ৭৪ টন ৩১০ কেজি লোহার স্ক্যাপ লোড করে ডেলিভারি নেন।
রাত ১০টার দিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে স্থানীয় এনআরবিসি ব্যাংকের সামনে এসে গাড়িগুলো বাঁধার জন্য দাঁড় করানো হয়। কিছু সময় পরেই অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু লোকজন এসে চালককে মারধর করে চালকসহ ছয়টি ট্রাক ছিনতাই করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে।
অভিযোগে তিনি বলেন, অনেক খোঁজখবর নিয়ে পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে পাবনা সদরের গাছপাড়া পেট্রোল পাম্পের সামনে মালামাল ভর্তি চারটি ট্রাকের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে আরও দুটি ট্রাকের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ছিনতাই হওয়া ওই ট্রাক দুটির চালক হলেন- আলতাব হোসেন (ট্রাক নং ঢাকা মেট্রো-ট-১৮-৪২৫১) ও কাওছার আলী (ট্রাক নং ঢাকা মেট্রো-ট ১৫-৫৫৫৬)।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর প্রতিনিধি আব্দুল হামিদ বলেন, পাবনা সদরের গাছপাড়া পেট্রোল পাম্পের কাছে থাকা ছিনতাই হওয়া মালামাল ভর্তি চারটি ট্রাক পাবনা সদর থানা পুলিশ ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার তৎপরতায় উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো মালভর্তি দুই ট্রাকের সন্ধান পায়নি ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।
তাঁর অভিযোগ, এর আগেও রূপপুর প্রকল্পের আশপাশে বেশ কয়েকটি লোহা ভর্তি ট্রাক ছিনতাই বা গায়েব হয়ে গেলেও সেগুলো উদ্ধার হয়নি। এই লোহা চোর চক্রের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারছেন না। ওই সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ওইদিন ঘটনাস্থলে থাকা পাবনা সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক জিয়াউর রহমান বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে আমরা খবর পেয়েছিলাম অবৈধভাবে লোহা ভর্তি ট্রাক সদরের গাছপাড়ায় আটক করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে গাড়ির সকল কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখি মালগুলো বৈধ। পরে মালামালসহ ট্রাকগুলো তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া দুই ট্রাক গায়েব বা ছিনতাই হওয়ার বিষয়টি জানা নেই।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চালকদের মোবাইল নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের শনাক্ত করতে একটু সময় লাগছে।
মাঝেমধ্যেই লোহার স্ক্যাপ চুরির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রূপপুর প্রকল্প ঘিরে দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যেই কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। তবে সদ্য ছিনতাই হওয়া দুটি ট্রাকের সন্ধান পেলে এর সঙ্গে জড়িতদের বের করা যাবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।