প্রতিনিধি কক্সবাজার: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর মর্টারের গোলা নিক্ষেপ ও রোহিঙ্গা কিশোর ইকবাল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। সোমবার বিকেলে সীমান্তের শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরে এ কর্মসূচির আয়োজন করে রোহিঙ্গারা। তারা আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে।
তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে বিতাড়িত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবিরে পেছনে রাখাইন রাজ্যের কাঁটাতারের বেড়া, এরপর উঁচু পাহাড়। গত শুক্রবার রাতে পাহাড়ের চৌকি থেকে ছোড়া মর্টারের শেলের গোলায় নিহত হয় আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা কিশোর মো. ইকবাল। গুরুতর আহত হয় এক শিশুসহ তিন পরিবারের আরও পাঁচ রোহিঙ্গা।
আশ্রয়শিবির প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে এই প্রথম রোহিঙ্গারা শূন্যরেখায় মানববন্ধনের আয়োজন করে। মানববন্ধনে ইংরেজিতে লেখা ব্যানার-পোস্টার প্রদর্শন করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশুরাও মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ, রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম, কামাল আহমদ প্রমুখ।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, শুরুর দিকে মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) গোলাগুলি-সংঘর্ষ শুরু হলেও এখন তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী পুলিশ (বিজিপি) একতরফাভাবে গোলাগুলি করছে। থেমে থেমে আর্টিলারি, মর্টারের গোলা ছুড়ে পরিস্থিতি অশান্ত করছে। তাতে শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আতঙ্কে। সকাল-বিকেল, রাত-ভোর—যখন-তখন গোলাগুলি ও মর্টারের শেল ছোড়ার ঘটনায় নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা। তাই রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দরকার।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মর্টারের গোলা নিক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এবং ইকবাল হত্যার বিচার দাবিতে এ মানববন্ধন পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ। তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাতের মর্টারের শেলের গোলার আঘাতে ছয়জন রোহিঙ্গার হতাহতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রোহিঙ্গারা। শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে গুলি ও মর্টারের শেল নিক্ষেপের ঘটনা পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। কারণ, মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনী বহু আগে থেকেই চাইছে আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের অন্যত্র (বাংলাদেশে) সরিয়ে দিতে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এই আশ্রয়শিবির ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নয়। কারণ, এই শিবিরের পেছনে রাখাইন রাজ্যেই রোহিঙ্গাদের বাড়ি। বাড়িতে ফেরার সুযোগ তৈরি হলে তারা আশ্রয়শিবির থেকেই হাঁটা পথে বাড়ি ফিরতে ইচ্ছুক।
দিল মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের সামরিক
জান্তা আট লাখ রোহিঙ্গাকে জন্মভূমি আরাকান (রাখাইন রাজ্য) থেকে উচ্ছেদ করে
বাংলাদেশ ঠেলে দিয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছে।
জান্তার গোলাগুলিতে এখানেও (শূন্যরেখায়) শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না। আমরা
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর চাপ প্রয়োগে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাইছি।’