‘খাদ্যের অভাবে’ বাংলাদেশের বাঘ যাচ্ছে ভারতে

 রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার |  ছবি: সংগৃহীত

অসিত পুরকায়স্থ, নয়াদিল্লি: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অংশে বিগত কয়েক বছরে অনেকটাই বেড়ে গেছে বাঘের সংখ্যা।

পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের বাঘ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের বাঘগুলো পশ্চিমবঙ্গের অংশে চলে আসাই বাঘ বৃদ্ধির প্রধান কারণ।

২০২১ সালে বাঘ শুমারি অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৯৬টি। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১২৩টিতে। অর্থাৎ নতুন বাঘ পাওয়া গেছে ২৭টি।

এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু না বললেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘এ বছরের গণনার তথ্য ও ছবি হায়দ্রাবাদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনও রিপোর্ট আসেনি, তবে বাঘের সংখ্যা বাড়ার ইঙ্গিত মিলেছে। নতুন ২৭টি বাঘ পাওয়া গেছে।’

 রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার |  ছবি: সংগৃহীত

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাঘ শুমারিতে গিয়ে সুন্দরবনের রামগঙ্গা ও অন্য পাঁচটি দ্বীপে বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই দ্বীপগুলোকে টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের এলাকার আওতাভুক্ত করা হচ্ছে এবং এখানকার বাঘের সংখ্যাও তালিকায় যুক্ত করা হবে।’

কিন্তু হঠাৎ করে কয়েক বছরে এত বাঘ পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে রাজ্য বন দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত দুটো কারণে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের সুন্দরবনে খাদ্যের অভাব ও যৌনসঙ্গীর খোঁজে ওপার বাংলা থেকে বহু বাঘ এপার বাংলায় চলে আসছে। তা ছাড়া বাঘের বংশবৃদ্ধি তো রয়েছে। ফলে এপার বাংলায় (পশ্চিমবঙ্গের অংশে) বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

পুরো সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ পড়েছে বাংলাদেশে আর বাকি ৪০ শতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশ অংশে খাদ্যের অভাব হলেও পশ্চিমবঙ্গে খাবারের অভাব দূর করতে নিয়মিত হরিণ ও শুয়োরের মাংসের জোগান দেয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।

খাবারের টানেই মূলত বাংলাদেশ অংশ থেকে বাঘ যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে।

বাঘ শুমারির সঙ্গে যুক্ত বন দপ্তরের এক কর্মী জানিয়েছেন, শুধু খাদ্যের জন্যই নয়, অনেক সময় যৌনসঙ্গীর খোঁজে বাংলাদেশ অংশের বাঘ ভারতে চলে আসছে।

বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘জঙ্গলে খাবারের টান পড়লেই বাঘ গ্রামে ঢুকে পড়ে। সে জন্য বাঘ নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঘের যাতে খাবারের অভাব না থাকে, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই নির্দেশ মেনে নৌকায় চাপিয়ে নিয়মিত হরিণ-শূকর ছেড়ে দিয়ে আসা হয় জঙ্গলে, বাঘের এলাকায়।

২০০৪ সালে বাংলাদেশের সুন্দরবনে প্রায় ৪০০টি বাঘ ছিল । ২০১৭ সালে তা ১৫০টিতে নেমে আসে। আর এখন তা ১২০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

 রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার |  ছবি: সংগৃহীত