বই কেনার জন্য গত বুধবার বগুড়া শহরের পড়ুয়া লাইব্রেরিতে আসেন নিখিল-সান্ত্বনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
বগুড়া প্রতিনিধি: ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় ভালোবাসার জন্য ‘বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে’ ১০৮টি নীলপদ্ম খুঁজে আনার কথা বলেছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বগুড়ার তরুণ কবি নিখিল নওশাদকে নীলপদ্ম খুঁজতে হচ্ছে না, তবে ভালোবাসার মানুষের জন্য তিনি খুঁজছেন ১০১টি বই।
আজ শুক্রবার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন নিখিল নওশাদ। বিয়ের দেনমোহর হিসেবে টাকা বা সোনাদানা নয়; দিতে হবে ১০১টি বই। হবু স্ত্রী এই ‘প্রিয় বই’–এর একটি তালিকাও ধরিয়ে দিয়েছেন তাঁকে। সেই তালিকা অনুযায়ী এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন বইয়ের দোকান তন্ন তন্ন করে খুঁজে ৭০টি বই সংগ্রহ করতে পেরেছেন নিখিল।
আজ বিয়ের দিনক্ষণ আগে থেকে ঠিক থাকায় দেনমোহরের কিছু বই বাকি রাখতে হচ্ছে। তবে নিখিল বলেছেন, বিয়ের পর দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখকদের আরও ৩১টি বই কিনে স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে মোহরানা শোধ করার ইচ্ছা আছে।
কবিতার সূত্র ধরেই পরিচয় হয় নিখিল–সান্ত্বনার | ছবি: সংগৃহীত |
নিখিল নওশাদ ‘বিরোধ’ নামের একটি ছোট কাগজের সম্পাদক। এক দশক ধরে কবিতা লেখালেখি করছেন। পাশাপাশি বেসরকারি একটি কোম্পানির বিক্রয় কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি বিয়ে করতে যাচ্ছেন শহরের উত্তর চেলোপাড়া দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক সান্ত্বনা খাতুনকে। দুজনেই পড়াশোনা করেছেন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে। সান্ত্বনা সোনাতলা উপজেলার কামালেরপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে। নিখিলের বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের সাতরাস্তা গ্রামে।
বগুড়ার কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডার স্থল শহরের টেম্পল সড়কের বইয়ের দোকান ‘পড়ুয়া’। সেখানেই সম্প্রতি হবু স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে নিয়ে দেনমোহরের বই কিনতে আসেন নিখিল নওশাদ। তালিকা ধরে খুঁজে খুঁজে দুই বাংলার বিখ্যাত লেখকদের বেশ কিছু বই কেনেন। হবু দম্পতির এমন বই কেনার ছবি ফেসবুকে দেয় ‘পড়ুয়া’ কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই সাড়া পড়ে যায় ভার্চ্যুয়াল অঙ্গণে। অনেকেই বিয়েতে মোহরানা হিসেবে বই উপহার দেওয়া–নেওয়ার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
কবি নিখিল নওশাদ বলেন, ‘কবিতার সূত্র ধরেই ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী সান্ত্বনা খাতুনের সঙ্গে পরিচয়। পরিচয় থেকে ভালোলাগা, ভালোবাসা। শেষে দুজনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। সান্ত্বনা শর্ত দেন, সোনাদানা নয়, বিয়ের দেনমোহর হিসেবে উপহার দিতে হবে ১০১টি প্রিয় বই। প্রিয় বইয়ের তালিকাও দিয়েছেন।’
নিখিল জানান, এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা ও বগুড়ার বিভিন্ন দোকান ঘুরে তালিকার ৭০টি বই কেনা সম্ভব হয়েছে। বাকি ৩১টি বই এখনো মেলাতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে কিছু বিদেশি লেখকের বইও আছে। আজ বাদ জুমা বগুড়া শহরের চেলোপাড়ায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। কাবিননামায় দেনমোহরের ৩১টি বই বাকি লিখতে হবে।
সান্ত্বনা খাতুন বলেন, ‘নিখিলের কবিতা পড়ে ওর প্রেমে পড়েছি। ওর কবিতা খুব ভালো লাগে। সোনাদানা, টাকাকড়ি আমার কাছে মূল্যহীন। বই আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। এ কারণে বিয়ের দেনমোহরানা হিসেবে ১০১টি বই চেয়েছি।’
বিয়ের পর পারিবারিক একটা গ্রন্থাগার গড়ার স্বপ্নের কথাও জানান সান্ত্বনা খাতুন। তিনি বলেন, সেখানে দেনমোহরের প্রিয় ১০১টি বই সাজিয়ে রাখবেন। প্রিয় বইয়ের তালিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ মুজতবা আলী ছাড়াও দুই বাংলার জনপ্রিয় ও বিদেশি লেখকের বই আছে।