টেনিসকে বিদায়ের ঘোষণা দিলেন রজার ফেদেরার | রয়টার্স

খেলা ডেস্ক: সব ভালো কিছুই নাকি কখনো না কখনো শেষ হতে হয়। শেষের সীমানাটা দেখতে পাচ্ছিলেন রজার ফেদেরারও। তবু শেষ বলার আগে একবার ফিরতে চাইছিলেন। আরেকটি গ্র্যান্ড স্লামের স্বপ্নই হয়েতা মনের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে মন চাইলেও চোটের সঙ্গে লড়াই করে আর পেরে উঠলেন না। জানিয়ে দিলেন বিদায়ের ক্ষণটাও। এ মাসের লেভার কাপই হবে তাঁর শেষ এটিপি অধ্যায়। এরপর আরও কিছু সময় টেনিস খেললেও সেটি গ্র্যান্ড স্লাম কিংবা কোনো ট্যুর নয়।

আয়োজন করে জানানোর পরিবর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারেই নিজের সিদ্ধান্তটা জানান ফেদেরার। ভিডিও ও লিখিত বার্তা দিয়েই বিদায়ের ঘোষণা দিয়ে ২০টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী এই তারকা বলেছেন, ‘আপনাদের অনেকেই জানেন, চোট ও অস্ত্রোপচারের কারণে তিন বছর ধরে আমি কতটা ভুগেছি। পূর্ণ শক্তিতে প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে ফিরতে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। তবে আমি আমার শরীরের সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানি।’

চোটকে হারিয়ে ফেরার তাড়নাটা বরাবরই ছিল ফেদেরারের। তবে শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না। ফেদেরার আরও যোগ করে বলেছেন, ‘এখন তার বার্তাটা আমার কাছে পরিষ্কার। আমার বয়স এখন ৪১ বছর। ২৪ বছরে আমি ১ হাজার ৫০০–এর বেশি ম্যাচ খেলেছি। টেনিস আমার প্রতি এত উদারতা দেখিয়েছে, যা আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। এখন আমাকে প্রতিযোগিতামূলক টেনিসকে বিদায় বলার সময়টাও বুঝতে হবে।’

রেকর্ড আট বার উইম্বলডন জেতেন ফেদেরার | রয়টার্স

২০২১ সালের উইম্বলডনের পর আর টেনিস মঞ্চে দেখা যায়নি ফেদেরারকে। এরপর তৃতীয়বারের মতো হাঁটুর অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে তাঁকে। তবে বিদায়ের আগে আরেকবার টেনিসের প্রতিযোগিতামূলক মঞ্চে দেখা যাবে ফেদেরারকে। সামনে লেভার কাপই হবে তাঁর শেষ ইভেন্ট, ‘আগামী সপ্তাহে লন্ডনে শুরু হতে যাওয়া লেভার কাপ আমার শেষ এটিপি ইভেন্ট। অবশ্যই ভবিষ্যতে আমি আরও টেনিস খেলব। তবে সেটা গ্র্যান্ড স্লাম কিংবা কোনো ট্যুরে নয়।’

১৯৯৮ সালে ১৬ বছর বয়সে পেশাদার টেনিসে অভিষেক হয় ফেদেরারের। ২০০৩ সালে উইম্বলডন দিয়ে নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপাও জিতে নেন তিনি। ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠেন ফেদেরার। এরপর ৩১০ সপ্তাহ শীর্ষে অবস্থান করেন তিনি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাঁর রেকর্ডটটি টপকে যান নোভাক জোকোভিচ।

টেনিসজগতে লম্বা সময় একক রাজত্ব ছিল ফেদেরারের। কেবল জয়ের ক্ষুধায় নয়, ব্যক্তিগত শৈলীতেও ফেদেরার নিজেকে ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন টেনিস মঞ্চে। একসময় টেনিসে সর্বোচ্চ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী তারকাও ছিলেন তিনি।

এর মাঝে রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে জমে ওঠে ফেদেরারের দারুণ এক লড়াই। বাকি দুজন অবশ্য এরই মধ্যে ফেদেরারকে টপকে গেছেন। ২২ গ্র্যান্ড স্লাম নিয়ে সবার ওপরে আছেন নাদাল এবং ২১ গ্র্যান্ড স্লাম জিতে ২ নম্বরে জোকোভিচ। ফেদেরার শেষ গ্র্যান্ড স্লামটি জিতেছেন ২০১৮ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সে গ্র্যান্ড স্লাম জেতা তারকাদের তালিকায় দুইয়ে আসেন তিনি।

কেবল জয়ের ক্ষুধায় নয়, ব্যক্তিগত শৈলীতেও ফেদেরার নিজেকে ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন টেনিস মঞ্চে | রয়টার্স

ফেদেরারের বিদায় নিয়ে এটিপি চেয়ারম্যান আন্দ্রেয়া গাউন্দেজি বলেছেন, ‘টেনিসে ফেদেরার যে প্রভাব তৈরি করেছেন, তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। পেশাদার টেনিসে ২৪ বছর পার করেছেন ফেদেরার, যার মধ্য দিয়ে টেনিসের লাখো ভক্ত তৈরি করেছেন তিনি। তিনি এই খেলার অবিশ্বাস্য একটি যুগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এর জনপ্রিয়তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। খুব কম অ্যাথলেটই এটি করতে পেরেছেন। রজার আমাদের গর্বিত করেছেন।’

ক্যারিয়ারে রেকর্ড আটবার উইম্বলডনের ছেলেদের এককের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। ফেদেরার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন ছয়বার, ইউএস ওপেন পাঁচবার। ক্যারিয়ারে একবারই জেতেন ফ্রেঞ্চ ওপেন।

গত বছর থেকেই টেনিসের বাইরে। এ বছর উইম্বলডন চ্যাম্পিয়নদের সংবর্ধনায় এসেছিলেন ফেদেরার | রয়টার্স