বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শিরোইল বাস্তহারা পাড়ায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: প্রতিদিনই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বাসাবাড়িতে গিয়ে বাঁশিতে ফুঁ দেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বাঁশি পেয়ে গৃহস্থালি বর্জ্য নিয়ে বাইরে বের হন বাসাবাড়ির লোকজন। এরপর এসব বর্জ্য এনে নগরের সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) এনে ফেলেন তাঁরা। সেখান থেকে আরেক দল কর্মী তা ময়লা ফেলার স্থানে নিয়ে যান।

যেসব মহল্লায় এখনো এসটিএস নির্মাণ করা হয়নি, সেগুলোতে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বর্জ্য এনে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে ভাগাড়ে নেওয়া হয়। ভিআইপি সড়ক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ময়লা অপসারণের জন্য রয়েছেন আরেক দল কর্মী। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই রাজশাহীকে পরিচ্ছন্ন নগরের মর্যাদা এনে দিয়েছে।

বুধবার দুপুরে রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস্তুহারাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানগাড়িতে করে বাসাবাড়ি থেকে বাঁশি বাজিয়ে ময়লা সংগ্রহ করছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিলদার হোসেন। তিনি  বলেন, ২১ বছর ধরে এই কাজ করেন। আগে ময়লা নিয়ে সড়কে ফেলা হতো, এখন সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে রাখতে হয়। বাইরে থেকে বোঝাই যায় না এসটিএসের ভেতরে ময়লা রয়েছে। শহরের রাস্তাঘাটে এখন আর ময়লা পড়ে থাকে না।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নগরের বর্জ্য অপসারণের সঙ্গে ১ হাজার ৪০০ জন কর্মচারী রয়েছেন। শহরে বর্তমানে ১২টি এসটিএস রয়েছে। ৩০টি ওয়ার্ডেই একটি করে এসটিএস নির্মাণ করা হবে। বাকিগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘তুলনামূলকভাবে বলা যায়, রাজশাহী দেশের একটি পরিচ্ছন্ন শহর। নগরের প্রধান এলাকাগুলো সুন্দর। তবে আমরা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর নগর চাই। এখনো কিছু অলিগলিতে ময়লা ও নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকতে দেখা যায়। যাঁরা এগুলো ফেলে রাখেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আইন আছে, তা কার্যর করতে হবে। পানিনিষ্কাশনব্যবস্থা আরও একটু সচল করতে হবে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী সরিৎ দত্তগুপ্ত ‘হেলদি সিটি প্রকল্প’ নামের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার একটি পাইলট প্রকল্প আনতে সক্ষম হন। শহরের কয়েকটি মহল্লায় ওই প্রকল্পের আওতায় অংশীদারত্বের ভিত্তিতে বর্জ্য অপসারণের জন্য বাসিন্দাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়, যাতে তাঁরা নিজের বাসার ময়লা একটা পাত্রে গুছিয়ে রাখেন। সিটি করপোরেশনের ভ্যান নিয়ে যাওয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ময়লা ভ্যানের কাছে নিয়ে আসেন। এক বছর পরে সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের জন্য ৩০টি ভ্যানের ব্যবস্থা করা হয়।

সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখন ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে বর্জ্য পরিবহনের ভ্যান রয়েছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হয় না। সিটি করপোরেশন থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। তবে নগরের কয়েকটি মহল্লা এখনো আগের পদ্ধতিই ধরে রেখেছে জানিয়ে সরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা ভ্যানচালককে এখনো টাকা দেন। এর সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা যুক্ত করেছেন তাঁরা।

সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়া আধুনিক করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। দীর্ঘ দিনে নাগরিকদেরও একটা অভ্যাস গড়ে উঠেছে। কয়েকটি এলাকা বাদে নগরের অন্যসব এলাকার বাসিন্দারা গাড়ি ছাড়া বাইরে বর্জ্য ফেলেন না। ইতিমধ্যে ১২টি এসটিএস নির্মাণ করা হয়েছে। বাকিগুলো হয়ে গেলে বাইরে থেকে আর কোনো আবর্জনা দেখা যাবে না।