আওয়ামী লীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: পাবনা সদর উপজেলার হিমাইতপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা সায়দার রহমান মালিথাকে (৫০) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সরাসরি অংশ নেওয়া ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল ও চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন মালিথার নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এ কথা স্বীকার করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী। গতকাল সোমবার রাতে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুন- পাবনায় আ.লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গাফুরিয়াবাদ গ্রামের আনোয়ার আহম্মেদ ওরফে স্বপন (৪২), চক ছাতিয়ানি গ্রামের মোহাম্মদ আশিক মালিথা (২৮), আফিল মালিথা (২২), কাশিপুর মহল্লার রিপন খান (২৭), জেলা শহরের মাটিয়া সড়ক মহল্লার নূরুজ্জামান রাকিব (২৪) ও ইয়াসিন আরাফাত (২৬)। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও চুরির তিন থেকে আটটি মামলা আছে।

আরও পড়ুন-  পাবনায় আ.লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ রহস্য উদ্‌ঘাটনে মাঠে নামে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ছয়জনকে শনাক্ত করে। সেই অনুযায়ী গতকাল রাতে জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, একটি বার্মিজ চাকু ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, একটি বার্মিজ চাকু ও তিনটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী দাবি করেন, হিমাইতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলাউদ্দিন মালিথা হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। নিহত সায়দার ও আলাউদ্দিন সম্পর্কে চাচাতো ভাই। আলাউদ্দিন চেয়ারম্যান থাকতে সায়দারের ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি দখল করেছিলেন। গত নির্বাচনে আলাউদ্দিন হেরে যাওয়ার পর সায়দার ওই জমি আবার নিজের দখলে নেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কয়েক দফা মারামারিও হয়। এর জেরে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন আলাউদ্দিনের ভাই রঞ্জু মালিথাকে মারধর করেন নিহত সায়দার ও তাঁর লোকজন। এতে খেপে গিয়ে সায়দারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আলাউদ্দিন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন। অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার হিমাইতপুর ইউনিয়নের চর বাঙ্গাবাড়ী গ্রামে সায়দার রহমান মালিথাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত সায়দারের বাড়ি ওই ইউনিয়নের কাবলীপাড়া গ্রামে। তিনি পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় গত রোববার বিকেলে নিহত সায়দারের ভাই আফজাল মালিথা বাদী হয়ে ২০ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় হিমাইতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথাকে প্রধান আসামি করা হয়।