পাবনা মানসিক হাসপাতাল | ফাইল ছবি
প্রতিনিধি পাবনা: পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগী ভর্তি বন্ধ ও ভর্তি রোগীদের বাড়ি পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়ার পর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে বদলি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার বিকেলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব জাকিয়া পারভীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বদলির এ আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশে মানসিক হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রতন কুমার রায়কে সরিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শাফকাত ওয়াজিদকে পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পদে পদায়ন করা হয়েছে।
তবে রতন কুমার রায় চিকিৎসক হিসেবে ওই হাসপাতালে যথারীতি কর্মরত থাকবেন বলে জানা গেছে। রতন কুমার রায় আজ সন্ধ্যায় নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেই সঙ্গে রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র স্থগিত চেয়ে করা মামলাটি এদিন বিকেলে পাবনা জেলা জ্যেষ্ঠ জজ আদালত খারিজ করে দিয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
রতন কুমার রায় বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। সোমবার হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো আমাকে সরিয়ে নতুন পদায়ন করা হয়েছে।’
পাবনা মানসিক হাসপাতালে গত বছরের ২৪ মে রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। রোজ এন্টারপ্রাইজ নামে আগের খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই দরপত্রের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করে। পরে আদালত পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই দরপত্র কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে পুনরায় দরপত্র দিয়ে নতুন ঠিকাদারও নিয়োগ করা যাচ্ছিল না। এ কারণে হাসপাতালে খাবার সরবরাহে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। মামলা খারিজ হওয়ায় খাবার সরবরাহে নতুন করে দরপত্র আহ্বানে বাধা দূর হলো।
এর আগে গতকাল রোববার বিকেলে হাসপাতালে খাবারসংকটে রোগী ভর্তি বন্ধ ও ভর্তি রোগীদের বাড়ি পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রতন কুমার রায়।
অফিস আদেশে রতন কুমার রায় জানিয়েছিলেন, আদালত হাসপাতালের টেন্ডার কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করায় টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে রোগীদের পথ্য সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা যায়নি। ভর্তি রোগীদের পথ্য বা খাবার সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো নির্দেশনা দেননি। ফলে রোগীদের খাবার চলমান রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হলো। একই সঙ্গে ভর্তি রোগীদের পর্যায়ক্রমে বাড়িতে পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে দুইভাবে রোগী ভর্তি চলে। এর মধ্যে ৩৫০ জন বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিতে পারেন। বাকি ১৫০ জন রোগীকে প্রতি মাসে ৮ হাজার ৫৫২ টাকা দিতে হয়। আজ সকাল পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৪৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৩৫০ জন বিনা মূল্যে শয্যায় ভর্তি রোগী। নির্দেশনা জারির পর আজ সকাল থেকে রোগী ভর্তি বন্ধ করা হয় এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসাধীন রোগীদেরই বাড়ি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনায় বেলা দুইটার দিকে রতন কুমার রায় তাঁর আদেশ প্রত্যাহার করেন।