পঙ্কজ দেবনাথের অব্যাহতির খবরে হিজলায় নেতা-কর্মীদের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ। সোমবার সন্ধ্যায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বরিশাল:  শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর জানার পর হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় তাঁর বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীরা আনন্দ-উল্লাস করছেন।

সোমবার বিকেলে তাঁরা দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।

বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দরে উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম নোমান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সালাউদ্দীন তালুকদার ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম বন্দরের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেন। তাঁরা এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তবে খবর প্রকাশের পর সংসদ সদস্যের অনুসারী কোনো নেতাকে মেহেন্দীগঞ্জ শহরে দেখা যায়নি।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দীন খান বিকেলে বলেন, পঙ্কজ দেবনাথের ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশের পর থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা নানাভাবে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তবে তিনি তাঁদের এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। অনেকে আনন্দ মিছিল করতে চেয়েছিলেন, তা করতে বারণ করা হয়।

পঙ্কজ দেবনাথের অব্যাহতির খবরে সন্ধ্যায় হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা পথচারীদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন হাওলাদারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এতে অংশ নেন। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ মাহমুদের নেতৃত্বে কাউরিয়া বাজার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফ খানের নেতৃত্বে হরিনাথপুর বাজারে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, অব্যাহতির খবর ছড়িয়ে পড়ার পর হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জে নেতা-কর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তাঁরা সবাই আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন। সংসদ সদস্য নিজের লোক দিয়ে এলাকায় যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন তাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। অনেক নেতা-কর্মীকে হামলা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়েছে।

কামাল উদ্দীন খান আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে চাই না। আগামীকাল মঙ্গলবার জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমাদের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে পারেননি। এ জন্য বুধবার ওই সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভার পরে আমরা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব।’

এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আজ দুপুরে চিঠিটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসের কাছে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদসহ অন্যান্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ। উপরিউক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা দেওয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস দুপুরে বলেন, গত চার বছরে মেহেন্দীগঞ্জে দলকে বিভক্ত করে নিজের বলয় সৃষ্টি করে পঙ্কজ দেবনাথ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, পঙ্গু করে দেওয়া, মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।