নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ চার ধাপ এগিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ইউএনডিপির প্রকাশ করা ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০২১–২২’–এ এই চিত্র উঠে এসেছে। এর আগের ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৩। এ বছর ১৯১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১২৯তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই প্রধান দেশ ভারতের অবস্থান ১৩২ ও পাকিস্তানের অবস্থান ১৬১তম। মানব উন্নয়ন সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। দেশটি বর্তমানে ৭৩তম।
ইউএনডিপি–বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। কারণ, এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বৈশ্বিকভাবে মানব উন্নয়ন সূচকের অবনমন ঘটেছে। বিশ্ব সেই ২০১৬ সালের অবস্থানে অর্থাৎ মানব উন্নয়ন ছয় বছর পিছিয়ে গেছে। সেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি বড় কারণ জাতীয় আয় বৃদ্ধি। যদি বৈষম্য বাড়তেই থাকে, তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে মানব সূচকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতির চিত্র দেখা গেছে। এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্বের ১৮৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৫তম। ২০১৮ সালে বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন সূচকে আগের বছরের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে ১৩৬তম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন পরিস্থিতি মধ্যম সারির।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ১৪৩, ভুটান ১২৭, মালদ্বীপ ৯০ ও আফগানিস্তান ১৮০তম অবস্থানে আছে।
মানুষের অগ্রগতি তুলে ধরতে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করা হয়। প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের গড় মান ০.৬৬১ যা ভারতের চেয়ে কিছুটা কম (০.৬৬৩)। তবে বাংলাদেশের গড় আয়ু (৭২.৪ বছর) ভারত (৬৭.২) ও পাকিস্তানের (৬৬.১) চেয়ে বেশি। শিক্ষার সূচকেও প্রতিবেশী দুটি দেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
নারী-পুরুষ সমতা উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভালো। এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ১২৯তম, ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান যথাক্রমে ১৩১ ও ১৬১।
ইউএনডিপির এই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে কোভিড–১৯ মহামারি আঘাত হানার পরের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে। মহামারির আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, খাদ্য ও পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিস্থিতিসহ সার্বিক জীবনমানের ওপর ভিত্তি করে সূচকগুলো নির্ধারণ করার কথা বলেছে ইউএনডিপি। কোভিড–১৯ মহামারির কারণে আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—মানব উন্নয়নের এই তিন সূচকই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘আনসার্টেইন টাইমস আনসেটেলড লাইভস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, বৈশ্বিক এই পশ্চাৎপদতার প্রধান চালক হলো কোভিড-১৯ মহামারি। এর সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জলবায়ুসংক্রান্ত আরও কিছু সংকট মানুষকে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে।
ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনার বলেন, ‘অতীতেও অনেক দুর্যোগ হয়েছে। আগেও অনেক সংঘাত দেখেছে বিশ্ব। কিন্তু এখন আমরা যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছি, তা মানবজাতির অগ্রযাত্রার জন্য বড় বাধা।’ জাতিসংঘের গবেষণা অনুসারে, বর্তমান বৈশ্বিক এ সংকটে ৯০ শতাংশের বেশি দেশের ওপর প্রভাব পড়েছে।
ইউএনডিপি মানব উন্নয়ন সূচকে সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ও আইসল্যান্ড শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। অন্যদিকে দক্ষিণ সুদান, চাদ ও নাইজারের অবস্থান সবার নিচে। কিছু দেশ করোনা মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার পাওয়ার পথে হাঁটতে শুরু করেছিল। কিন্তু লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের কিছু দেশ ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকট সৃষ্টি হওয়ায় মানব উন্নয়ন সূচকে এখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি।
স্টেইনার বলেন, চলতি বছরের সূচকের ক্ষেত্রে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি হিসাবে ধরা হয়নি। ২০২২ সালের সূচকে পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আরও খারাপ হবে।