বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ এ কর্মসূচি পালন করেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে পাঁচটি গ্রামের ১০ হাজার মানুষকে রক্ষা করতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় লোকজন। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা রাজাবাড়ীহাট এলাকায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ এ কর্মসূচি পালন করেন।

মানববন্ধনে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন, রাজাবাড়ীহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামারুজ্জামান, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন, ইউপি সদস্য আফতাব উদ্দিনসহ ভাঙনকবলিত এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন।

ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন বলেন, দুই বছর ধরে দেওপাড়া ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিমতলা, চকপাড়া, খারিজাগাতী, বাদলবারই পাড়া ও আলীপুর গ্রামের মানুষ পদ্মার অব্যাহত ভাঙনের কারণে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। গত বছর বড় বড় আমবাগান, বাড়িঘর ও ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার ২০০ বছরের মন্দির থেকে নদী এখন মাত্র ১০ মিটার দূরে। এ ছাড়া এলাকায় আরও পাঁচটি মসজিদ ও অপর দুটি মন্দিরও ঝুঁকিতে রয়েছে। খারিজাগাতী মোল্লাপাড়া ও নিমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে ভয় পাচ্ছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ-মন্দিরগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এসব দাবি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবো) একাধিকবার আবেদন করা হলেও পাউবো বিষয়টি আমলে নেয়নি দাবি করে বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘পাউবো দুই বছর ধরে নৌকা নিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় শুধু মাপজোখ করে। কিন্তু বাস্তবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তারা দিনের বেলায় জিও ব্যাগ পাঠিয়ে আবার রাতের বেলায় ফেরত নিয়ে যায়। পরে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, অন্য এলাকার বস্তা ওই এলাকায় গিয়েছিল। এ জন্য সেগুলো ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা রাজশাহী পাউবোসহ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

রাজাবাড়ীহাট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামারুজ্জামান বলেন, এ এলাকায় স্কুল, কলেজ, সরকারি যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সরকারি দুগ্ধ খামার, পশুপুষ্টি খামার, ভেটেরিনারি কলেজ রয়েছে। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে এ প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো সময় পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এ জন্য এখনই ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। শুধু পাঁচটি গ্রামের মানুষ নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকার ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়তে পারেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, ওই এলাকায় গত এপ্রিল মাস থেকে ঠিকাদার কাজ করছেন। আগস্ট মাসে ৬ হাজার ৫০০ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এক কিলোমিটার এলাকার ভাঙনরোধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু চার কিলোমিটার এলাকা ভাঙছে। পুরো কাজ করতে হলে প্রকল্প করতে হবে। এখন প্রকল্প করতে হলে সম্ভাব্যতা (ফিজিবিলিটি) যাচাই করতে হয়। এ জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নদী শুধু গোদাগাড়ীতেই ভাঙছে না, চারঘাটেও ভাঙছে। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হচ্ছে রাজশাহী শহর। তাদের সব দিকেই নজর রাখতে হচ্ছে। যখন যেখানে বস্তার প্রয়োজন সেখানে নেওয়া হচ্ছে।