বাসচাপায় মোটরসাইকেলে থাকা শাকিলসহ দুইজন নিহত হন। এ সময় মোটরসাইকেলটিতে আগুন ধরে যায়। রোববার দুপুরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া: সেনাবাহিনীর সৈনিক শাকিল আহম্মেদ (২৩) এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে গত শুক্রবার শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। রোববার দুপুরে মা-বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিজ বাড়িতে আসার কথা ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবা আবদুল মজিদ মুঠোফোনে কল দিলে বলেছিলেন, ‘দরকারি কাজে শিবগঞ্জ আছি, একটু পর বাড়ি ফিরছি।’

ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাবা আবদুল মজিদ। পছন্দের খাবার রান্না করেছিলেন মা খুকিনা বেগম। ‘বাবায় আমার বাড়িতে ঠিকই ফিরেছে, তবে লাশ হয়ে’, কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন আবদুল মজিদ।

 সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তখন তিনি গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা থেকে ছেলের লাশ নিয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের কমলিহার গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন।

রোববার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল বাজারে পাবনাগামী নবীনবরণ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় শাকিলসহ দুজন নিহত হন।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, কৃষক বাবা আবদুল মজিদের একমাত্র ছেলে শাকিল আহম্মেদ ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। রাজশাহী সেনানিবাসে প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন তিনি। গত ঈদুল আজহার পর তাঁকে কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে বদলি করা হয়।

শাকিলের শ্বশুরবাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জে। তাঁর বাবা আবদুল মজিদ বলেন, বুড়িগঞ্জ গ্রামের কলেজছাত্রী মহুয়া আকতারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল শাকিলের। বছরখানেক আগে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। মহুয়া নামুজা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার রামু সেনানিবাস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিয়ে বগুড়ায় আসেন শাকিল। শুক্রবার সকালে বুড়িগঞ্জে পৌঁছান তিনি।

রোববার দুপুরে শাকিলের নিজ বাড়িতে আসার কথা ছিল জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবদুল মজিদ বলেন, সকাল ১০টার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হয় শাকিল। ওর মা ওর জন্য দুপুরের রান্না করেন। বাড়িতে আসতে দেরি হওয়ায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছেলেকে মুঠোফোনে কল দেন তিনি। তখন শাকিল বলেন, তিনি দরকারি কাজে শিবগঞ্জে আছেন, একটু পর বাড়ি ফিরবেন। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে খবর আসে, শিবগঞ্জের রহবল এলাকায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন তাঁর ছেলে।

বাসচাপায় শাকিল আহম্মেদের মোটরসাইকেলের পেছনে থাকা এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম সাবিনা ইয়াসমিন ওরফে সোনিয়া (২০)। তিনি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা শাখৈল গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে এবং গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী।

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ না থাকায় শাকিল ও সাবিনার লাশ দুই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।