এশিয়া কাপে দুই দলের তিনবার দেখা হয়ে যেতে পারে, এমন সমীকরণে উঠছিল ওপরের কথাটি। তবে প্রথম দুই ম্যাচে যা দেখা গেল, তাতে ফাইনালেও দুই দলের দেখা হয়ে গেলে হয়তো আপত্তি করবেন না কেউ! এমন রোমাঞ্চ নিশ্চয়ই মিস করতে চাইবেন না আপনি! শুধু মাঠের বাইরে উত্তেজনা নয়, মাঠেও তো লড়াই হলো হাড্ডাহাড্ডিই। গ্রুপ পর্বে দুই দলের প্রথম ম্যাচ ছিল মোটামুটি ‘লো স্কোরিং অ্যাফেয়ার’। সুপার ফোরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারত ও পাকিস্তান দেখাল ‘হাই স্কোরিং থ্রিলার’।
দুবাইয়ে আগের ম্যাচ শেষ হয়েছিল হার্দিক পান্ডিয়ার উদ্যাপনে, এবার সেটি দেখল খুশদিল শাহ ও ইফতিখার আহমেদের উচ্ছ্বাস। দুবাইয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৫১ বলে ৭১ রানের সঙ্গে চারে উঠে আসা মোহাম্মদ নেওয়াজের ২০ বলে ৪২ রানের ইনিংসে ভারতের দেওয়া ১৮২ রানের লক্ষ্য পাকিস্তান পেরিয়ে গেছে ১ বল ও ৫ উইকেট বাকি রেখে। ভারতের বিপক্ষে এটিই এখন তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়।
ম্যাচে পাকিস্তানের একটি পরিবর্তন ছিল চোটের কারণে। ভারত অবশ্য আনে তিনটি পরিবর্তন—চোটের সঙ্গে সেখানে আছে কৌশলগত কারণও। রবীন্দ্র জাদেজার চোটে খেলানো হয় দীপক হুদাকে, বিশ্রামে থাকা হার্দিক পান্ডিয়াকে ফেরানো হয়, দলে আসেন লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয়ও। এ ম্যাচের আগে প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড় বলেছিলেন, এখন থেকে সেরা একাদশই নামাবেন তাঁরা। তবে হুদা আজ শেষ পর্যন্ত বোলিং করেননি, ফিনিশারের ভূমিকায় রবীন্দ্র জাদেজা বা দীনেশ কার্তিকের মতো কারও অভাবও টের পেয়েছে তারা।
ভারতের টপ অর্ডারের তিনজনই সম্প্রতি ছিলেন আলোচনায়। বেশ কিছুদিন ধরেই এ সংস্করণে ভুগছিলেন লোকেশ রাহুল, হংকংয়ের বিপক্ষে আগের ম্যাচে তো ধুঁকেছেন। রোহিত শর্মার পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড সুবিধার নয়, সম্প্রতি স্বরূপে ছিলেন না তিনিও। আর বিরাট কোহলি কবে নিজেকে ফিরে পাবেন—সেটি তো হয়ে দাঁড়াচ্ছিল কোটি টাকার প্রশ্ন।
পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের মেলে ধরলেন তিনজনই। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের পেস আক্রমণের ওপর চড়াও হলেন প্রথমে রোহিত, পরে যোগ দিলেন রাহুলও। প্রথম ৫ ওভারেই দুজন মিলে তোলেন ৫৪ রান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পল স্টার্লিং ও কেভিন ও’ব্রায়েনের ১৩টি ৫০ বা এর বেশি রানের জুটির রেকর্ডও নিজেদের করে নিয়েছেন তাঁরা।
রোহিতকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেকথ্রু দেন হারিস রউফ, তবে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান মূলত দুই স্পিনার—মোহাম্মদ নেওয়াজ ও শাদাব খান। সূর্যকুমার যাদব, ঋষভ পন্ত, হার্দিক পান্ডিয়া বা দীপক হুদা—ভারতের মিডল অর্ডারে বিস্ফোরক ইনিংস ছিল না। নেওয়াজ ও শাদাব মিলে ৮ ওভারে দিয়েছেন ৫৬ রান, নিয়েছেন ৩ উইকেট। সেখানে ৩ পেসার বাকি ১২ ওভারে দিয়েছেন ১২১ রান।
ভারত অবশ্য থেমে যেতে পারত আরও কম রানের মধ্যেই, তবে সেটি হতে দেননি কোহলি। অন্য প্রান্তে উইকেট হারালেও দারুণ নিয়ন্ত্রণে ব্যাটিং করেছেন, ভারতকে ভালো একটি সংগ্রহ এনে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছেন ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংসে। অবশেষে কোহলি ফর্মে ফিরলেন, টানা দুটি ফিফটির পর এমনটি এখন বলাই যায়। শেষ ২ বলে ফখর জামানের দুই মিসফিল্ডে ভারতের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ১৮১ রানে। ফখরের ওই মিসফিল্ডের আগে অবশ্য ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত সময়ই কাটিয়েছে পাকিস্তান।
রান তাড়ায় ভারতের মতো উড়ন্ত শুরু পায়নি পাকিস্তান। উল্টো বাবর আজমকেও চতুর্থ ওভারেই হারিয়ে ফেলে তারা—নিজের প্রথম ওভারেই সফল হন রবি বিষ্ণয়। ফখরও শেষ ২ ওভারে অতিরিক্ত ৭ রান দেওয়ার দায় ঠিক মোচন করতে পারেননি, যুজবেন্দ্র চাহালের শিকার হওয়ার আগে ১৮ বলে ১৫ রান করেছেন তিনি।
তবে ভারতের যে ভূমিকা কোহলি পালন করেছেন, পাকিস্তানের হয়ে সে কাজটি করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আগের ম্যাচেও হংকংয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের ইনিংস ধরে রেখেছিলেন, ভারতের বিপক্ষেও একই কাজ করলেন এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানকে রান তাড়ায় অবশ্য এগিয়ে নেওয়ার বড় ভূমিকা রেখেছেন চারে উঠে আসে মোহাম্মদ নেওয়াজ। ‘অ্যাগ্রেসর’-এর ভূমিকা তিনি পালন করেছেন দুর্দান্ত স্টাইলে। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ বলে করেছেন ৪২ রান, রিজওয়ানের সঙ্গে তাঁর জুটিতে উঠেছে ৪১ বলে ৭৩ রান। দুজনের কেউই অবশ্য ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি।
তবে স্ট্রাইক রেটে এ বছর সবার চেয়ে এগিয়ে থাকা পাকিস্তানের মিডল অর্ডার ছিল
তখনো। পাকিস্তান স্পিনারদের সাফল্য দেখার পরও রোহিত তৃতীয় স্পিনার হিসেবে
দীপক হুদাকে বোলিংয়ে আনেননি, ভরসা রেখেছেন ৫ বোলারের ওপরই। শেষ ২ ওভারে
প্রয়োজন ছিল ২৬ রান, তবে ভুবনেশ্বর কুমারের করা ১৯তম ওভারেই ওঠে ১৯ রান।
আর্শদীপ সিং ভারতকে শেষ ২ বলের আগপর্যন্ত ম্যাচে রেখেছিলেন। তবে টানা
ইয়র্কারের চেষ্টা সফল হয়নি। প্রথমে ইয়র্কারের চেষ্টায় তাঁর লো ফুলটসে
আসিফের চারের পর ইফতিখার আহমেদের ডাবলসে জয় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের।