হাটে সারি করে রাখা পুরোনো মোটরসাইকেল। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে প্রতি শুক্রবার বসে এ হাট | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: সারি করে রাখা পুরোনো মোটরসাইকেল। ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউবা চালিয়ে দেখছেন মোটরসাইকেল। করছেন দর-কষাকষি। রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে একটি হাটের দৃশ্য এটি। তবে আর দশটা হাটের চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা। এখানে শুধু পুরোনো মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়।

গত ১২ আগস্ট এ হাটের উদ্বোধন করা হয়। প্রতি শুক্রবার বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হাট চলে। এর মধ্যে চার দিন বসেছে হাট। গত দুই শুক্রবার বিকেলে হাটে গিয়ে প্রচুর লোকসমাগম দেখা গেছে।

নওহাটা এলাকা থেকে হাটে এসেছেন মো. লিটন নামের এক ক্রেতা। হাটেও এসেছিলেন তিনি। ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বাজেটের মধ্যে মোটরসাইকেল খুঁজছিলেন লিটন। তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ায় অনেকেই মোটরসাইকেল বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেই সুযোগে কম দামে মোটরসাইকেল কেনার জন্য এসেছেন। দামে মিললে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন।

অন্যদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার চৌবাড়িয়া এলাকা থেকে মোটরসাইকেল বিক্রি করতে এসেছেন মো. লিখন। তিনি বলেন, বন্ধুদের মাধ্যমে এ হাটের খবর জেনেছেন। তাই এখানে নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করতে এসেছেন। মোটরসাইকেলের দাম হেঁকেছেন ৭০ হাজার। এর চেয়ে ভালো মোটরসাইকেল কিনতে চান বলে এটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

হাটে মোটরসাইকেল দরদাম করছেন ক্রেতারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে পড়ায় হাটে মোটরসাইকেল তুলেছেন পবার শ্রীপুর এলাকার মাহাতাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে আমার ভালো লাগছে। অনেকেই আসছেন, মোটরসাইকেল চালিয়ে দেখছেন।’

হাট সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে মোটরসাইকেল কিনলে ক্রেতাকে দিতে হবে ৬০০ টাকা। আর বিক্রি করলে বিক্রেতাকে দিতে হয় ৪০০ টাকা। হাটে বিক্রির জন্য মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও সঙ্গে আনতে হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতার কাগজপত্র ও ফোন নম্বর হাট কর্তৃপক্ষ রেখে দেয়।

পুরোনো দুটি মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য নগরের দামকুড়া এলাকা থেকে হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম। মূলত পুরোনো মোটরসাইকেল কিনে অনলাইনে বিক্রি করেন তিনি। হাটের খবর পেয়ে এখানে এসেছেন। রাশেদুল বলেন, হাট মূলত উন্মুক্ত দর-কষাকষির জায়গা। দেখেশুনে মোটরসাইকেল কিনতে পারছেন সবাই, অনলাইনে যা সম্ভব নয়।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে এসেছেন রবিউল ইসলাম। এক সপ্তাহ ধরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ঘরে মোটরসাইকেল ফেলে না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন। পরে আয় বাড়লে আবার কিনবেন।

রবিউল আরও বলেন, আগে তাঁরা মেকানিক বা মোটরসাইকেলের যন্ত্রপাতি বিক্রি করেন, এমন ব্যক্তিদের কাছে মোটরসাইকেল বিক্রির কথাই ভাবতেন। এবার সরাসরি মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারছেন।

ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো মোটরসাইকেল বিক্রির হাট এই প্রথম দেখেছেন তাঁরা। অনেকেই হাটে এসেছেন ঘুরে ঘুরে বুঝে দেখার জন্য। ফলে বিক্রি কম।

জানতে চাইলে হাটের প্রধান উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, এলাকায় সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে হাটটি শুরু করেছেন। ১২ আগস্ট উদ্বোধনের পর থেকে হাট মোটামুটি জমে গেছে। হাটের ইজারার জন্য তাঁদের কোনো টাকা দিতে হবে না। ‘চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষ’ নামের একটি কমিটি আছে। হাট থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ দুস্থদের চিকিৎসাসেবার ব্যয় বহন করা হবে।

এ হাটে সম্পূর্ণ বৈধ মোটরসাইকেল বিক্রি হয় জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল বিক্রির সময় কাগজপত্র দেখে রসিদ দেওয়া হয়। অবৈধ মোটরসাইকেল পেলে তাঁরাই প্রশাসনকে জানাবেন।

সামনে হাট জমলে এখান থেকে সরকার রাজস্ব পাবে বলে মনে করেন নওহাটা পৌরসভার মেয়র মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ হাটের পরিকল্পনাকারী ও মূল উদ্যোক্তা নাজমুল ইসলাম। প্রস্তাব দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, হাট থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ তাঁরা আর্তমানবতার সেবায় ব্যয় করবেন। এ ছাড়া হাট ঘিরে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এমন ভালো চিন্তার কারণে হাটের অনুমতি দিয়েছেন।