চা–শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রী: সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা আমি করে দেব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের চা–শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন। শনিবার গণভবনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ সরকার চা–শ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা-শ্রমিকদের নাগরিকত্ব প্রদান করায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাঁদের প্রতি বিশেষ দায়িত্ব অনুভব করেন।

শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চা–শ্রমিকদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সরকার সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ সব মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে এবং সব গৃহহীনকে বিনা মূল্যে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা–শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা আমি করে দেব। এই মাটির ওপর আপনাদের অধিকারটা যেন থাকে, সেই ব্যবস্থাটাই করে দিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যেমন নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, তেমনি আপনাদের (চা–শ্রমিকদের) প্রতি আমার আলাদা দায়িত্ব রয়েছে। আমি সব সময় সেই অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি।’

ভিডিও কনফারেন্সে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে যোগদানকারী চা–শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই চা–শিল্পকে বিকশিত করার পাশাপাশি চা–শ্রমিকেরা যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন, সে বিষয়ে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চা–শ্রমিকদের সব সমস্যার সমাধান ও চা–শিল্পকে (দেশের অন্যান্য অঞ্চলে) ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন, তখন এই শিল্পের বিকাশ ও চা–শ্রমিকদের উন্নত জীবন নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন, তখন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তাঁকে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান করেন। জাতির পিতাই চা বোর্ডের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন। পরে ১৯৫৮ সালে তিনি গ্রেপ্তার হলে ২৩ অক্টোবর স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সে দায়িত্ব কেড়ে নেন। কিন্তু তিনি সেই সময়েই চা-বাগান ও শ্রমিকদের অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে চা–শিল্প যেন নবোদ্যমে যাত্রা শুরু করতে পারে, সে পদক্ষেপও তিনি নেন।

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা জ্বালাও–পোড়াও ও দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানা, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ধ্বংসের পাশাপাশি চা–বাগানেরও ক্ষতিসাধন করে। কিন্তু জাতির পিতা দেশ স্বাধীনের পর পুনরায় এ শিল্পের পুনরুজ্জীবনে পদক্ষেপ নেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

চা–শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, চা–বাগানের মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে চা–শ্রমিকেরা যাতে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন, সে জন্য তাঁর সরকার তাঁদের দৈনিক মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, আমরা তাঁদের (চা–শ্রমিকদের) দাবিগুলো উপলব্ধি করতে পারি।’

গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী চা–বাগানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে চা–শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয় এবং তাঁদের জন্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী চা–শ্রমিকদের মজুরি পুননি৴র্ধারণ করা প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর কথা মালিকেরা মেনে নেওয়ায় তিনি তাঁদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মালিকেরা শ্রমিকদের প্রতি যত্নবান হবেন বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, চা–শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে তিনি সত্যিই খুব খুশি। শ্রীমঙ্গলে চা–বাগান পরিদর্শনকালে চা–শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনকি উপহার নিয়ে চা–শ্রমিকেরা গণভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে আসেন। যেটি তাঁর জন্য অনেক সম্মানের এবং চা–শ্রমিকদের জমানো পয়সা ও ভালোবাসা দিয়ে প্রদান করা এত বড় উপহার আর কোনোদিনও পাননি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মতবিনিময়কালে চা–শ্রমিকদের ছোটখাটো কয়েকটি প্রয়োজনের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে তা পূরণের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা–শিল্প যেন ধ্বংস না হয়, সে জন্য তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত থাকবে।

সিলেটের চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন