চাল | ফাইল ছবি

প্রতিনিধি কুষ্টিয়া ও নওগাঁ: চালের আমদানি শুল্ক কমানোর পরও দামে কোনো প্রভাব পড়েনি কুষ্টিয়া ও নওগাঁর খাজানগর মোকামে। আগের চড়া দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। তবে মোকামে চালের চাহিদা কমেছে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা চাল কিনতে ফরমাশ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। আগের দেওয়া ফরমাশও বাতিল করছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।

গত রোববার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে চালের ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানিতে এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। এই ঘোষণার পর ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হয়েছে ৭৫০ মেট্রিক টন। গত রোববার আমদানির পরিমাণ ছিল এর অর্ধেক।

গতকাল সোমবার কুষ্টিয়ার খাজাগর মোকামে সরু (মিনিকেট) চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকায়। মোটা চাল ৫১ টাকা ও কাজল লতা ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ১০ দিন ধরে মোকামে এই দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁ শহরের পার নওগাঁ মোকামে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে মিনিকেট ৬৪–৬৫ টাকা, বিআর–২৮ (মোটা চাল) ৫০–৫১ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মিলমালিক ও চাল আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর ঘোষণার কারণে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই মিলে উৎপাদিত চালের অর্ডার কমতে শুরু করে। গতকাল নতুন করে চাল বিক্রির অর্ডার পাননি মিলার ও আড়তদারেরা। ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা চাল কেনার জন্য মোকামে আগে যেসব অর্ডার দিয়েছিলেন, সেগুলো বাতিল করছেন।

নওগাঁ সদর উপজেলার দুটি চালকলের মালিক শেখ ফরিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকার কয়েকজন মহাজন চাল কেনার জন্য অর্ডার দিয়েছিলেন। তাঁরা আজকে ফোন করে আপাতত অর্ডার করা চাল না পাঠানোর জন্য বলেছেন।’ চালের আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে বাজার পড়ে যেতে পারে। লোকসানের আশঙ্কা থেকেই আপাতত ব্যবসায়ীরা চাল কিনছেন না বলে জানালেন এই চালকলমালিক।

জ্বালানি তেল ও ধানের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ২০ দিন ধরে দফায় দফায় চালের দাম বাড়িয়েছেন চালকলমালিকেরা। মোকামগুলোতে সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ টাকা করে বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, আমদানি শুল্ক কমায় চালের দাম কমার সম্ভাবনা আগামী কয়েক দিন নেই। চাল কেনার ফরমাশ শুরু হলে দাম কমতে পারে। সেটা আরও পাঁচ থেকে সাত দিন লাগতে পারে।

নওগাঁ শহরের আলুপট্টি মোকামে প্রায় ৫০টি চালের পাইকারি আড়ত রয়েছে। মোকামের মেসার্স ঘোষ আড়তের ব্যবস্থাপক মামুন সরদার বলেন, গতকাল দুপুর পর্যন্ত তিনি চাল বিক্রির কোনো অর্ডার পাননি। বাকি আড়তগুলোর অবস্থাও একই রকম। ঢাকার কয়েকজন মহাজনের কাছে চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা কম নেওয়ার কথা বললেও তাঁরা কোনো সাড়া দেননি।

আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে চালের পাইকারি বাজারে ইতিমধ্যে একটা প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন নওগাঁ জেলা চালকলমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার। তিনি বলেন, মোকামে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এভাবে দিনের পর দিন মোকাম ক্রেতাশূন্য থাকলে মিলাররা দাম কমাতে বাধ্য হবেন। তবে কী পরিমাণ চাল আমদানি হয়, সেটার ওপরেই নির্ভর করছে চালের বাজারে কতটা প্রভাব পড়বে।

এদিকে প্রতিনিধি, দিনাজপুর জানান, দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে প্রায় ২২৮টি চালবাহী ভারতীয় ট্রাক পণ্য খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৪টি ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করা হয়েছে। স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে চাল আমদানি বেড়েছে। স্থানীয় চালের এর বাজারে প্রভাব পড়বে।