মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ছোড়া এই মর্টার শেল ঘিরে রেখেছেন বিজিবি সদস্যরা | ছবি: জেলা পুলিশের সৌজন্যে

প্রতিনিধি কক্সবাজার: কক্সবাজার মিয়ানমার থেকে ছোড়া দুটি মর্টার শেল বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়েছে। তবে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যরা মর্টার শেল দুটি ঘিরে রেখেছেন। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।

আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু বাজার এলাকায় মর্টার শেল দুটি পড়ে। স্থানীয় প্রশাসন ও ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহ দুয়েকের বেশি সময় ধরে সীমান্তের ওপারে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। আজ সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই হয়। দুপুরে সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ও যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখা যায়। এরপর বিকেলে বাংলাদেশের সীমান্তের মধ্যে মর্টার শেল পড়ার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশে এসে পড়া মর্টার শেল দুটো বিস্ফোরিত হয়নি। আশপাশের লোকজনকেও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

সীমান্তে নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মর্টার শেল দুটো নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। নাইক্ষ্যংছড়ির ওই সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্ব কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের। নানাভাবে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে বিজিবি অধিনায়কের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মর্টার শেল পড়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ পারে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। শূন্যরেখার দিকে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, ১৬-১৭ দিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষ চলছে। গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে আকাশ ভারী হচ্ছে। শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২০০ জন সদস্য রয়েছেন। গোলাগুলির শব্দে তাঁরা বেশি আতঙ্কে রয়েছেন।

ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক সোহাগ রানা  বলেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তে গোলাগুলি হচ্ছে। মর্টার শেলসহ গুলির শব্দ কানে বাজলেও প্রকৃত অর্থে সেখানে কী হচ্ছে, বলা মুকশিল। তবে আজ বিকেলে দুটি মর্টার শেল বাংলাদেশে সীমান্তে পড়েছে। সেখানে যাওয়ার অবস্থা নেই।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।

একই সময় ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া খালের দক্ষিণে শূন্যরেখার এক খণ্ড জমিতে আশ্রয়শিবির গড়ে তুলে বসতি শুরু করে।

আশ্রয়শিবিরের কয়েক গজ দূরত্বে মিয়ানমার সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। কাঁটাতারের বাইরে পাহাড়চূড়ায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একাধিক চেক পোস্ট রয়েছে।

শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ বলেন, গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দে শরণার্থীরা চরম আতঙ্কে রয়েছে।

কারও চোখে ঘুম নেই। আজ দুপুরে হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরের ২০-৩০ গজ দূরত্বে মিয়ানমারের পাহাড়। সেখানে চলছে আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাসদস্যদের সংঘর্ষ। গুলি কিংবা মর্টার শেল এসে যদি আশ্রয়শিবিরে পড়ে, তাহলে অনেকে প্রাণ হারাবে।

দিল মোহাম্মদের (৫০) বাড়ি রাখাইন রাজ্যের মেদি পাড়ায়। ১০ বছরের বেশি সময় তিনি বিজিপির সদস্য ছিলেন। অস্ত্র ও গুলি সম্পর্কে তাঁর ধারণা রয়েছে। ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের সঙ্গে তাঁকেও জন্মভিটা ছেড়ে সপরিবার পালাতে হয়। সেই থেকে স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে তিনিও শূন্যরেখার বাসিন্দা। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৪ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গার।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটারের। ঘুমধুম ইউনিয়নের লোকসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।