চালকলের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবি

চালকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে নওগাঁয় এক সমাবেশ করা হয়। সোমবার দুপুরে জেলা শহরের মুক্তির মোড় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নওগাঁ: ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে নওগাঁয় সমাবেশ করেছেন চালকলের শ্রমিকেরা। আজ সোমবার দুপুরে শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নওগাঁ জেলা ধান্য বয়লার ও অটো সাটার শ্রমিক ইউনিয়ন এ সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত না থাকায় একেক চালকল একেক রকম মজুরি দিচ্ছে। কোথাও একজন শ্রমিক দিনে ১৫০ টাকা, কোথাও ২০০ টাকা, কোথাও ২৫০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে তিন বেলার খাবার হিসেবে কোথাও এক কেজি, আবার কোথাও দুই কেজি করে চালের খুদ (ভাঙা চাল) দেওয়া হয়। বর্তমান বাজারে এই মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকেরা। সরকারের মধ্যস্থতায় মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এখন সময়ের দাবি।

জেলা ধান্য বয়লার ও অটো সাটার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোজাফফর হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাগিব আহসান, সিপিবির নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মোহসীন রেজা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইজুল হক, সহসাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, শ্রমিক নেতা শিমুল রহমান, রেশমা খাতুন, মেরিনা আখতার প্রমুখ।

রাগিব আহসান বলেন, গত ৩০ বছরে চালকল মালিকদের উন্নতি হলেও চাতাল শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার বলছে, দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ চাতাল শ্রমিকদের কোনো খাদ্য নিরাপত্তা নেই। শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। যেই চাতাল শ্রমিকের রক্ত-ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে মানুষ শুদ্ধ চালের ভাত খান, সেই চাতাল শ্রমিক ও তাঁদের সন্তানেরা খুদ খেয়ে জীবন ধারণ করেন। বর্তমান বাজারে একজন মানুষের দৈনিক মজুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি অমানবিক। এই মজুরি কমপক্ষে ৫০০ টাকা হওয়া উচিত।

শ্রমিক নেতা মোজাফফর হোসেন বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী এবং শ্রমিক ও চালকল মালিকপক্ষের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর চালকল কারখানার শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় হওয়ার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত চালকলের শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় করা হয়নি। আট বছর আগের চুক্তি অনুযায়ী একজন চাতালশ্রমিক প্রতি বস্তা ধান শুকানোর জন্য এক টাকা, ট্রাকে ধান-চাল লোড-আনলোডের জন্য তিন টাকা করে পাওয়ার কথা। এই চুক্তিতে কাজ করে একজন শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে উপার্জন করেন। অনেক মালিক সেই চুক্তিও মানে না।

বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইজুল হক বলেন, জেলায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ২০০ চালকল আছে। এসব চালকলে ৩০ হাজারের ওপর শ্রমিক কাজ করে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে চালকল শ্রমিকেরা যে বেতন পান এটা অমানবিক ও অবাস্তব। তাঁরা চান শ্রম আইন অনুযায়ী মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হোক।