নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দলে দলে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে কক্সবাজারে | ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। সংকট সমাধানে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের একটি ছোট দল হলেও রাখাইনে পাঠানো শুরু করতে চায়। তাই রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে চায় বাংলাদেশ। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলছে, রাখাইনে এখনো প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হয়নি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে এক আলোচনায় দুই পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) ‘রোহিঙ্গা সংকট: প্রত্যাবাসনের পথ’ শীর্ষক ওই আলোচনার আয়োজন করে।
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এই সংকটের শুরু মিয়ানমারে, সমাধানও মিয়ানমারে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
আশা করি, ছোট দলে হলেও প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তাদের আস্থা তৈরি করতে আসিয়ান ভূমিকা রাখতে পারে।’
বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত নোয়েলিন হেজার বলেন, রাখাইনের পরিবেশের কোনো উন্নতি হয়নি। রোহিঙ্গারা যেসব কারণে পালিয়ে এসেছিল, সেগুলোর সুরাহা হয়নি। সেখানে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করাটা মিয়ানমারের কাজ।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের প্রসঙ্গ টেনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেকোনো উদ্যোগে তাদের যুক্ত করতে হবে। শরণার্থীরা ফিরে যেতে চায়। তবে সেটি হতে হবে স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ।
নোয়েলিন হেজার বলেন, এ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দেওয়া জরুরি। এ জন্য বাংলাদেশের বোঝা কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভাগাভাগি করে দায়িত্ব নেওয়াটা জরুরি।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ ও আসিয়ানের আগ্রহ হচ্ছে, মিয়ানমারে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরত আনা। কিন্তু বাংলাদেশ আশা করে, তাদের এ উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের বিষয়টিও যেন অন্তর্ভুক্ত থাকে।
পররাষ্ট্রসচিবের মতে, রোহিঙ্গারা যাতে ফিরে যেতে পারে, সে জন্য রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অন্য অংশীদারেরা উদ্যোগ নিতে পারে।
ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের শরণার্থীবিষয়ক আঞ্চলিক সমন্বয়ক ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পাঁচ বছর পর দেখা গেছে যে এটি ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন বা নিকট ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের টেকসই, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।’
ম্যাকেঞ্জি রো বলেন, কক্সবাজারের শিবিরে প্রতিবছর অস্থায়ী কাঠামো তৈরির বদলে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করার ওপর জোর দিতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে সিজিএসের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমার তড়িঘড়ি কিছু রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চাইবে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে চাইবে, তারা প্রত্যাবাসন শুরু করেছে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকা দরকার। আমরা মিয়ানমারের ফাঁদে পড়ে যেতে পারি। পুরো প্রক্রিয়া না জেনে, না বুঝে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে না।’
সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ভ্যান লিউয়েন।