সুজন হোসেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পাবনা: পূর্ববিরোধ ও চুল-দাঁড়ি কাটা নিয়ে তর্কের জেরে সুজন হোসেন (৩০) নামে হিযবুত তওহীদের এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ১০ জন। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আজ বুধবার ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সুজন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার চর ঘোষপুর নফসারের মোড়ে হিযবুত তাওহীদের কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত সুজন সদর উপজেলা হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ঘোষপুর গ্রামের মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আনিছুর রহমান মণ্ডলের ছেলে। তিনি হিযবুত তাওহীদ পাবনা জেলা শাখার সদস্য এবং পেশায় ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি ছিলেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, নফসারের মোড়ে কার্যালয় করে সুজন ও তাঁর সমর্থকেরা হিযবুত তাওহীদের কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন। তাঁদের মতাদর্শ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকাবাসীর সঙ্গে তাঁদের বিরোধ চলছিল। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ওই ক্লাবের সঙ্গে একটি সেলুনের দোকানে হিযবুত তাওহীদের এক সদস্যের চুল-দাঁড়ি টাকা নিয়ে তর্ক হয়। 

আধা ঘণ্টা পর স্থানীয় শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের কার্যালয়ে হামলা করে। এরপর হিযবুত তাওহীদের সদস্যের এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সুজনের অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাঁকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 

নিহত সুজনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহানা খাতুন ও ভাই মোমেনুল ইসলাম জানান, হিযবুত তাওহীদের মতাদর্শ নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে সুজনের দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁরা তাঁকে অনেক বুঝিয়েছেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। গতকাল রাতে চুল-দাঁড়ি কাটা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে তর্ক হয়। পরে তাঁদের এলাকার শেখ গোষ্ঠীর লোকজন লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁদের কার্যালয়ে হামলা করে কুপিয়ে ও পিটিয়ে সুজনকে হত্যা করে। 

এ বিষয়ে হিযবুত তাওহীদের পাবনা জেলা শাখার আমির সেলিম শেখ বলেন, ‘ঘোষপুর ইউনিট কার্যালয়ে দলের সদস্যদের নিয়ে আমি দৈনন্দিন কার্যক্রম চালাচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ করে প্রচুর মানুষ আমাদের কার্যালয়ের সামনে এসে চিৎকার করে বলে, ‘‘ওরা খ্রিষ্টান-কাফের, ওদের ধর আর মার।” এ সময় আমরা কার্যালয়ের ভেতর থেকে সামনে দাঁড়ালেই কোপানো শুরু হয়।’ 

এ নিয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম বলেন, ‘ওইখানে হিযবুত তাওহীদের কার্যালয় আছে। সেখানে তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর বিরোধ ছিল। রাতে সম্ভবত চুল-দাঁড়ি কাটা নিয়ে হিযবুত তাওহীদের একজন সদস্য একজন এলাকাবাসীকে থাপ্পড় মারেন। পরে স্থানীয় কিছু লোক দলবদ্ধ হয়ে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।’ 

এদিকে এ ঘটনার মূল হোতা আলাল হোসেনসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ রামেকে ময়নাতদন্ত শেষে পাবনায় নিয়ে আসা হবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।