আজ সফরের তৃতীয় দিনে ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন কেন্দ্র পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে মিশেল ব্যাশেলেতের রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মসূচি শুরু হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
সানজিদা আফরিন উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের কাছে রোহিঙ্গারা নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তবে রাখাইনের এখনকার পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো শুরু করাটা ঠিক হবে না বলে মনে করেন মিশেল।

আজ মঙ্গলবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা আলাদা তিনটি  মতবিনিময় সভা করেন মিশেল ব্যাশেলেত।  উখিয়ার ৪ নম্বর শিবিরে এসব বৈঠক শেষে রোহিঙ্গারা মিশেলের দেওয়া পরামর্শের কথা জানান।

আজ সকালে শুরুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনা রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় নেতা ও রোহিঙ্গা তরুণদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

চার দিনের বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সোমবার বিকেলে মিশেল ব্যাশেলেত কক্সবাজার পৌঁছান। আজ সফরের তৃতীয় দিনে ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন কেন্দ্র পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে তাঁর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ই-ভাউচার কেন্দ্র পরিদর্শনের পর রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে মত বিনিময় করেন।

নারীদের সঙ্গে মত বিনিময়
উখিয়ার ৪ নম্বর শরণার্থী শিবিরের নারী বান্ধব কেন্দ্রে মিশেল ব্যাশেলেত নয় জন রোহিঙ্গা নারী প্রতিনিধির সঙ্গে মত বিনিময় করেন। প্রায় ৪০ মিনিটের এই আলোচনায় তিনি তাদের কাছে শিবিরে তারা কেমন আছেন, প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের ভাবনা এসব নিয়ে জানতে চান। সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার বিষয় নিয়েও জানতে চেয়েছেন মিশেল ব্যাশলেত।

জানতে চাইলে শিবিরের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা এখন বাংলাদেশে কেমন আছি জানতে চেয়েছিলেন তিনি। আমরা সবাই বলেছি, আমরা এখানে রাখাইনের তুলনায় ভালো আছি। কিন্তু এটা তো আমাদের দেশ নয়। আমরা রাখাইনে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু সেখানে এখনও অনেক অশান্তি বিরাজ করছে। তাই তাঁকে রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতির জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’

রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় কি না আমিনা খাতুনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মিশেল ব্যাশেলেত। আমিনা জানিয়েছেন এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘রাখাইনে শান্তি করে দিলে, আগস্টের নৃশংসতার জন্য ক্ষতিপূরণ দিলে আমরা চলে যাব। কিন্তু তা না দিলে যাব না।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত গুল নাহার এই প্রতিবেদককে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিবিরের পরিস্থিতির যে অবনতি হয়েছে তা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, এসব ঘটনা ঘটছে তা যেমন ঠিক। আবার নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে এটাও ঠিক।

কালুন নেসা নামের অপর এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, প্রত্যাবাসনের আগে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে সেখানে গিয়ে তো থাকা যাবে না। মোট কথায় আমরা ফিরে যেতে চাই এটা সবাই যেমন বলেছি। তেমনি যাওয়ার আগে আমাদের যা যা পাওয়ার সেগুলো দিতে বলেছি।

রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ না পেলে রোহিঙ্গারা ফিরবে না বলার পর মিশেল ব্যাশেলেত কী বলেছেন জানতে চাইলে গুল নাহার বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত রাখাইনের পরিস্থিতি অনুকূল হবে না পাঠানো ঠিক হবে না তিনি মন্তব্য করেছেন। আমাদের ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘ সহায়তা করার বিষয়ে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি আমাদের যে অপেক্ষা করতে হবে সেটা বলেছেন।’

ধর্মীয় নেতার অভিমত
রোহিঙ্গা নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের পর মিশেল ব্যাশেলেত শিবিরের নয় জন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে মত বিনিময় করেন। এদের সবাই মূলত মসজিদ ও মাদ্রাসায় নানা পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

 রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও মত বিনিময় করেন মিশেল ব্যাশলেত | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জানতে চাইলে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ জামিল এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘শিবিরে যে মারামারি হচ্ছে তা নিয়ে জাতিসংঘের হাইকমিশনার জানতে চেয়েছেন। প্রশাসনকে নানাভাবে সহায়তার পাশাপাশি আমরা খারাপ কাজ এবং যে কোন অবৈধ কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকতে লোকজনকে প্রতিনিয়ত বলছি। এরপরও এসব হচ্ছে।’রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘ সব ধরণের চেষ্টা করবে বলে মিশেল ব্যাশেলেত তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা শিবিরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে হাফেজ খুরশিদ বলেন, ১২ থেকে ২০ বছর বয়েসে রোহিঙ্গাদের কোনো কাজ নেই। এলেম শিক্ষা নেই। এসব কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তাই আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় শিক্ষায় জোর দিয়েছি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার রোহিঙ্গাদের কীভাবে পড়ানো হচ্ছে তা নিয়ে খোঁজ নেন। কি কি লাগবে তা জানতে চেয়েছেন।

প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে হাফেজ খুরশিদ বলেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য তিনি আমাদের ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের অধিকার নিশ্চিত করে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করবে এটি তিনি নিশ্চিত করেছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরা আপনাদের অনিশ্চিত জীবনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দেব না।

মৌলভী নূর মোহাম্মদ জানান, কক্সবাজারের শিবিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কেন হচ্ছে তা তিনি জানতে চেয়েছেন।