আওয়ামী লীগ ডাক দিলেই সাড়া দেব: সোহেল তাজ

বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হওয়ার গুঞ্জনের মধ্যে জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগে ডাক পড়লেই সাড়া দেবেন তিনি। এও বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক। তিনি এই দলের বাইরের কেউ নন। চিরকাল তাই থাকবেন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সোমবার সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন এক যুগ আগে অভিমান করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেয়া এই নেতা।

সোহেল তাজকে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় নেতা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নানা কর্মসূচি পালনের সময় তিনি পুলিশের পিটুনির শিকার হয়েছিলেন বারবার।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ভূমিধস জয়ের পর সোহেলকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরই ৩১ মে মন্ত্রিসভা থেকে ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেন।

আর ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করে দেশের বাইরে চলে যান। কিন্তু তাকে নিয়ে আলোচনা কখনও শেষ হয়ে যায়নি। মাঝে রাজনীতির বাইরে থেকে নানা সামাজিক আন্দোলন করেছেন তাজউদ্দীনপুত্র। বর্তমানে তরুণদের ব্যায়ামে উৎসাহী করার চেষ্টা করছেন।

আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলনের আগেও তাকে দলের নেতৃত্বে ফেরানোর বিষয়ে নানা আলোচনা হয়। ওই সম্মেলনে যোগও দিয়েছিলেন তিনি। তবে পদ পাননি। এবারও সম্মেলনের আগে আগে তার নেতৃত্বে ফেরার বিষয়ে গুঞ্জন বড় হয়েছে।

রাজনীতি নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তাজউদ্দীনপুত্র বলেন, ‘আমি মনে করি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ না আমি। আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, চিরকাল থাকব।

‘রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও মনে-প্রাণে আমি আওয়ামী লীগার। আমার মনে-প্রাণে বাংলাদেশের জন্য আন্তরিকতা ও ভালোবাসা। আমাকে যদি প্রয়োজন হয়, ডাক পড়লে আমি সাড়া দেব। আবার রাজপথে থাকব, ২০০১ সালে যেমন ছিলাম।’

শেখ হাসিনা যদি আপনার হাতে কোনো দায়িত্ব তুলে দেন, সেটা কীভাবে দেখবেন?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব আছে। কারণ লাখ লাখ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা যে অবস্থায় থাকি, সেখান থেকে অবদান রাখতে হবে।’

সোহেল তাজকে নিয়ে সাম্প্রতি আলোচনা তার ছোট বোন মাহজাবিন আহমদ মিমির একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে। তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন কাউন্সিল অধিবেশনে তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ) দলীয় নেতৃত্বে আসছেন ইনশাআল্লাহ।’

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসন থেকে ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার পরিকল্পনায় তেমন কিছু নেই। আমি যেটা বরাবরই বলে আসছি যে আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আমার পিতা শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমার মা ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বব্যাপী জঘন্যতম একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমাদের জাতির পিতা বাংলার মানুষকে মুক্তি এবং স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছিলেন এবং আমাদের একটি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সোনার বাংলার, যে সোনার বাংলার মানুষের সবার সমান অধিকার থাকবে।

‘জাতির জনককে নির্মমভাবে হত্যা করাটা আমাদের বুকে একটা ছুরিকাঘাত। আমি মনে করি নতুন প্রজন্মকে এই বিষয়টাকে জানতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে বঙ্গবন্ধুর অবদান এবং জীবনবৃত্তান্ত। আমরা সঠিকভাবে যেন তুলে ধরতে পারি। আমি মনে করি তার সংগ্রামী যে জীবন এবং ওনার পাশে যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে উনি যে সংগ্রাম করেছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম, সেটাই হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি।’

সোহেল তাজ বলেন, ‘আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর জীবনী, জাতীয় চার নেতার জীবনীসহ সকল শহীদ যারা আমাদের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের জীবনী যদি আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি, তাহলে আমরা একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারব বাংলাদেশের।’