জ্বালানি বাবদ বাড়তি ব্যয়ের কারণে আগামী বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের এক–তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে | প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের মানুষের জীবনমান, আয় ও অর্থনীতির ওপর করোনা মহামারির প্রভাব ছিল আগে থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞায় বেড়েছে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের দাম। সামনে শীত আসছে। শীতকালে এ সংকট আরও বাড়তে পারে। ফলে জ্বালানি পেতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের, যা সরাসরি প্রভাব ফেলবে তাদের জীবনে। জ্বালানি বাবদ বাড়তি ব্যয়ের কারণে আগামী বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের এক–তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। খবর সিএনএনের 

পরিবেশ, জ্বালানি ও দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর বৈশ্বিক জোট এন্ড ফুয়েল পোভার্টি কোয়ালিশন (ইএফপিসি) মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) যুক্তরাজ্যের প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ পরিবার ‘জ্বালানি দারিদ্র্য’–এর শিকার হবে। অর্থাৎ এসব পরিবারের মানুষের আয় দেশটির সরকারের বেঁধে দেওয়া দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। আর এর পেছনে ভূমিকা রাখবে জ্বালানি কিনতে বাড়তি ব্যয়।

যুক্তরাজ্যের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালে যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় ৩৭ হাজার ৫০০ ডলারের নিচে ছিল, তাদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে ধরা হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্নওয়েল ইনসাইট তাদের পূর্বাভাসে বলেছে, আগামী অক্টোবরে যখন শীত শুরু হবে, তখন পরিবারগুলোর বার্ষিক গড় জ্বালানি ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৩৩৫ ডলারে। এ খাতে ব্যয় ক্রমাগত বাড়তির দিকে থাকায় আগামী জানুয়ারি নাগাদ তা আরও বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৫ হাজার ১৬৩ ডলারে (প্রতি মাসে প্রায় ৪৩০ ডলার)। আগামী জানুয়ারি নাগাদ যুক্তরাজ্যের মানুষের জ্বালানি বাবদ ব্যয় এখনকার তুলনায় ১১৬ শতাংশ বাড়বে। তবে ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে জ্বালানি ব্যয় কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত বছর থেকেই যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের জ্বালানি ব্যয় বাড়তে শুরু করে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছর যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলোর জ্বালানি বিল ৫৪ শতাংশ বেড়ে গেছে। বাড়তি চাপ পড়েছে সাংসারিক ব্যয়ে। গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের সরকার ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর আওতায় বাড়তি জ্বালানি ব্যয়ের চাপ কমানোর জন্য আগামী অক্টোবর নাগাদ দেশটির ২ কোটি ৯০ লাখ পরিবারের একেকটিকে ৪৮৪ ডলার করে সহায়তা দেওয়া হবে।

ইএফপিসির সমন্বয়ক সাইমন ফ্রান্সিস বলেন, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে এ সহায়তা প্যাকেজ অসীম মহাসাগরে একটি বিন্দুর সমান। অন্যদিকে কর্নওয়েল ইনসাইটের প্রধান পরামর্শক ক্রেইগ লোওরে বলেন, মানুষের অবস্থার অবনতি ঠেকাতে এখনকার বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়।

যুক্তরাজ্যের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার শেষ দৌড়ে রয়েছেন। আগামী মাসের শুরুতে জানা যাবে বরিস জনসনের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, ট্রাস নাকি সুনাক। লিজ ট্রাস সাধারণ মানুষের জ্বালানি ব্যয়ের বাড়তি চাপ কমাতে কর সংকোচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, সরাসরি অর্থসহায়তা দেওয়ার চেয়ে কর কমানো ভালো বিকল্প হতে পারে। অন্যদিকে ঋষি সুনাক সহায়তার অর্থ বরাদ্দ আরও বাড়ানোর পক্ষে।