তাইওয়ানের সময় মঙ্গলবার রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে নয় সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে তাইপেতে অবতরণ করেন ন্যান্সি পেলোসি | ছবি: টুইটার

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গতকাল মঙ্গলবার রাতে তাইপে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত তাইওয়ান সফর শুরু করেছেন। তিনি তাইপে পৌঁছানোর পরই তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল দিয়ে ২১টি চীনা সামরিক বিমান উড়তে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তাইপের কর্মকর্তারা।  

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। টুইটারে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ২১টি সামরিক বিমান গতকাল দিবাগত রাতে (২ আগস্ট) তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করেছিল।’

তাইওয়ানের এডিআইজেড চীনের দাবিকৃত স্ব-শাসিত এ দ্বীপটির প্রচলিত আকাশসীমা নয়। তাইওয়ানের এডিআইজেড-এ চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি চীনের মূল ভূখণ্ডের কিছু অংশও রয়েছে। যদিও তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে বেইজিং।

এদিকে চীনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘উচ্চ সতর্ক’ অবস্থানে আছে এবং পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিবাদে সামরিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে কবে ও কীভাবে এর জবাব দেওয়া হবে, তা জানায়নি। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তাদের সেই আগুনে পুড়তে হবে।’

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে এশিয়া সফরে রয়েছেন। মালয়েশিয়া থেকে গতকাল রাতে তাঁরা তাইপে পৌঁছান। যদিও পেলোসির সফরের খবর জানার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে আসছিল চীন। এ নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং ব্যাপক উত্তেজনাও চলছে।

২৫ বছরের মধ্যে তাইওয়ান সফর করা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিন রাজনীতিবিদ পেলোসি। তবে তাঁর সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমর্থন দেননি। এদিকে পেলোসির তাইওয়ান সফরে ক্ষুব্ধ চীন। এই সফরকে বড় ধরনের উসকানি মনে করছে বেইজিং। এর পরিণতি ভালো হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে।

রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছে, পেলোসির সফর উসকানিমূলক এবং তা এ অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। এদিকে তাইওয়ানে পৌঁছানোর পর টুইট করে পেলোসি বলেন, তাঁর প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের গতিশীল গণতন্ত্রের’ প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অবিচল প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে।

পেলোসির তাইওয়ান সফরের তীব্র নিন্দা এবং একে এক চীন নীতির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, এই সফর চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে আগুন নিয়ে না খেলার ব্যাপারে সতর্ক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

পেলোসির সফর কেন্দ্র করে তাইওয়ান প্রণালিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবার তাইওয়ান প্রণালির মধ্যবর্তী অঘোষিত সীমানায় একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়। এদিকে ওয়াশিংটন তাইওয়ানের উত্তর উপকূলে চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমানবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে।

দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ পেলোসির এই সফর নিয়ে অনেক গা জ্বলা রয়েছে চীনের। কারণ, তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড মনে করে বেইজিং। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এর দখল নিতে চায়। কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করে। আর দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে চীনের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকে বাইডেন প্রশাসন পেলোসির এখন তাইওয়ান সফরে যাওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছিল। তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যেখানে খুশি যাওয়ার অধিকারের মতো তাইওয়ান সফরের অধিকার আছে ন্যান্সি পেলোসির।