রাজশাহী জেলার মানচিত্র

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে একটি বেসরকরি কলেজের অধ্যক্ষকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান এই অভিযোগ করে দাবি করেছেন, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে চড়থাপ্পড়, কিল–ঘুষি মেরেছেন। সমিতির পক্ষ থেকে ঘটনাটি তিনি তদন্ত করাবেন বলে জানিয়েছেন।

এ ঘটনায় ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল–হোসেনকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

৭ জুলাই রাতে ওমর ফারুক চৌধুরীর রাজশাহী নগরের থিম ওমর প্লাজার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী অধ্যক্ষের নাম নাম সেলিম রেজা। তিনি গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অধ্যক্ষ ফোরামের আলোচনায় আটজন অধ্যক্ষ ও একজন উপাধ্যক্ষ ছিলেন। আলোচনা চলাকালে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় তিনি তাঁদের থামিয়ে দেন। থামাতে গিয়ে তাঁদের কাউকে ধাক্কাও দিতে হয়েছে। এমনটি হতে পারে। সেখানে অধ্যক্ষের গায়ে হাত তোলার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এমন কথা অধ্যক্ষ সেলিম রেজাও বলতে পারবেন না। তিনি দাবি করেন, ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে করে তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।

ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুর রহমান এর আগে জামায়াতপন্থী একজন অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছিলেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনা জানার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. মশিউর রহমান বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল–হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। কমিটিকে যত দ্রুত সম্ভব সরেজমিনে ঘটনার সবিস্তার জেনে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনাও দেন উপাচার্য।

বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য বলেন, অধ্যক্ষকে মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ঘটনার ব্যাপারে ভুক্তভোগী শিক্ষক সেলিম রেজার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাজশাহী নগরের পূর্ব রায়পাড়া মহল্লায় তাঁর বাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। দরজায় নক করলে ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেননি। একজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, সেলিম রেজা বাসায় নেই।

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, এর আগেও তিনি সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। এবার সমিতির পক্ষ থেকে তদন্ত করে তিনি একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। যাতে আর কোনো অধ্যক্ষের এভাবে অসম্মানিত হতে না হয়। তিনি বলেন, ঘটনার পর তিনি অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ঘটনার কথা নিশ্চিত করেছেন।

উদীচীর বিচার দাবি
উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এক বিবৃতিতে জানান, গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, অভিযোগের বিষয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়েই সংসদ সদস্য ওমর ফারুক অধ্যক্ষ সেলিমকে সবার সামনেই বেধড়ক মারধর করেছেন। তাঁর আঘাতে অধ্যক্ষ সেলিমের শরীরের বেশ কয়েকটি জায়গায় মারাত্মক জখম হয়েছে।

বিবৃতিতে উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে একজন সংসদ সদস্য যখন একজন সম্মানিত অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন, তখন তার চেয়ে নিন্দনীয় কাজ আর হতে পারে না। মাত্র কিছুদিন আগে নড়াইলে একজন অধ্যক্ষকে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। সে ঘটনার এখন পর্যন্ত কোনো সুষ্ঠু বিচার হয়নি।

উদীচীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বলেন, অতীতে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত, নওগাঁর শিক্ষক অমোদিনী পাল বা মুন্সিগঞ্জের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে হেনস্তা ও হয়রানির ঘটনায় কোনো সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় বারবার শিক্ষক লাঞ্ছনার এমন ঘটনা ঘটছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ঘটনার বিচার না হলে প্রগতিশীল সংগঠনগুলো ও শিক্ষক সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে উদীচী দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলবে।

সিপিবির বিচার দাবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স আজ এক বিবৃতিতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার ওপর সংসদ সদস্য ওমর ফারুকের হামলায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংসদ সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জানতে পারলাম কলেজ অধ্যক্ষকে সংসদ সদস্য সন্ত্রাসী কায়দায় বেপরোয়া কিল–ঘুষি ও হকিস্টিক দিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট আঘাত করেছেন। এ খবর প্রকাশিত হলো বেশ কদিন পর। ভয়ের সংস্কৃতি কোথায় পৌঁছেছে, এ ঘটনাসহ সম্প্রতি অনেক ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।’