বাংলাদেশ সরকারের লোগো |
নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করার অভিযোগে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সারকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এই কথা জানান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তাঁকে ওএসডি করে নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। এখন উচ্চ আদালত কী নির্দেশনা দেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকাল রোববার বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মেলনে জোরালোভাবে বলা হয়েছে তাঁরা যখন জেলায় যাবেন তখন সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে চাল চলন আচার-আচরন... এটি তো সাংবাদিকের বিষয় নয়, এই ভাষায় কারও সঙ্গে কথা বলা যায় না। যত বেশি ব্যবস্থাপনার কাজে থাকবেন, ওপরে থাকবেন তত বেশি মাথা ঠান্ডা করে কথা বলতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে টেকনাফের ইউএনও মোহাম্মদ কায়সার তাঁর অফিশিয়াল মুঠোফোন নম্বর থেকে কল করেন স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে। এ সময় সংবাদ প্রকাশের কারণ জানতে চেয়ে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। রেকর্ড করা তাঁর ফোনকলের অডিও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ইউএনওর ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরদিন শুক্রবার বিকেলে শহরের হিলডাউন সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে উভয় পক্ষকে নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের উদ্যোগে বৈঠক হয়।
বিষয়টি নজরে আনা হলে উচ্চ আদালত বলেছেন, ‘রং হেডেড পারসন’ ছাড়া কেউ এভাবে বলতে পারে না। সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন নজরে আসার পর আদালত এ মন্তব্য করেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার এ মন্তব্য করেন।
সাংবাদিককে গালি দেওয়া ও ইউএনওর দুঃখ প্রকাশ নিয়ে গণমাধ্যমে আসা একাধিক প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেছেন।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। রং হেডেড পারসন ছাড়া কেউ এভাবে বলতে পারে না। যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা কোনো ভাষা হতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, ইউএনও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এর অর্থ তাঁর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন।
সাংবাদিকেরা সমাজের দর্পণ, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ উল্লেখ করে আদালত বলেন, তাঁরা অপরাধ করলে আইন আছে, প্রেস কাউন্সিল আছে। তবে কেউ এভাবে গালিগালাজ করতে পারেন না। আইন নিজের হাতে তুলেও নিতে পারেন না।
ঘর উপহার দেওয়া প্রসঙ্গে আদালত বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ কার্যক্রম প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে যে ভাষা ব্যবহার করেছে (ইউএনও), তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিনের উদ্দেশে আদালত বলেন, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দেখে ও জেনে আদালতকে জানান।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নিচু জায়গায় নির্মাণ করা উপহারের ঘর পানিতে ভাসছে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কায়সার (খসরু) অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের টেকনাফ প্রতিনিধি সাইদুল ফরহাদকে গালাগালি করেন। পরে জেলা প্রশাসকের বৈঠকে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। জেলা প্রশাসক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। গালমন্দ করার অভিযোগের সত্যতা এবং সত্য হলে ইউএনওর বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা মৌখিকভাবে জানাতে বলেছেন আদালত। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করা হবে।