বেঞ্চের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে ব্রাজিল | ছবি: রয়টার্স

খেলা ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়া মাঝেমধ্যে কিছু ঝলক দেখাল বটে, কিন্তু ব্রাজিলকে সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারল না তারা। ম্যাচ জুড়ে আক্রমণে একচেটিয়া আধিপত্য করল তিতের দল। দাপুটে পারফরম্যান্সের অসাধারণ প্রদর্শনীতে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি পর্বে বড় জয় পেল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

সিউলের বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে হওয়া আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি ৫-১ গোলে জিতেছে ব্রাজিল।

সফরকারীদের হয়ে জোড়া গোল করেন নেইমার। একবার করে জালের দেখা পান রিশার্লিসন, ফিলিপে কৌতিনিয়ো ও গাব্রিয়েল জেসুস।

পোস্ট আর ক্রসবার বাধা হয়ে না দাঁড়ালে ব্যবধান বাড়তে পারত আরও।

সবশেষ চার ম্যাচে ১৭ গোল করার পাশে ব্রাজিল হজম করেছে স্রেফ একটি। আগের তিন ম্যাচের প্রতিটিতে তাদের জয় ছিল ৪-০ গোলে।

দ্বিতীয় মিনিটেই আলেক্স সান্দ্রোর ফ্রি-কিক থেকে হেডে দক্ষিণ কোরিয়ার জালে বল পাঠান চিয়াগো সিলভা। তবে অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি।

বেশিক্ষণ অবশ্য অপেক্ষায় থাকতে হয়নি ব্রাজিলকে। সপ্তম মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে সান্দ্রোর দারুণ পাসে ফ্রেদের জোরাল শট রিশার্লিসনের পায়ে লেগে জালে জড়ায়।

পরের মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন রাফিনিয়া। ডান দিকের বাইলাইনের কাছ থেকে নেইমারের কাট ব্যাকে বল উড়িয়ে মারেন তিনি।

টানা দশমবারের মতো বিশ্বকাপে ওঠা দক্ষিণ কোরিয়া দ্বাদশ মিনিটে প্রথম সুযোগ পায়। তারকা ফরোয়ার্ড সন হিউং-মিনের প্রচেষ্টা চিয়াগো সিলভা ঠেকানোর পর বক্সের বাইরে থেকে হোয়াং ইন-বিওমের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ওয়েভেরতন।

৩১তম মিনিটে দারুণ গোলে সমতা টানেন হোয়াং উই-হো। সতীর্থের পাস ধরে সঙ্গে লেগে থাকা সিলভার বাধা এড়িয়ে জোরাল শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ২৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

৩৮তম মিনিটে সান্দ্রোর চিপে রিশার্লিসনের জোরাল হেড ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক। পরক্ষণে বক্সে প্রতিপক্ষের চ্যালেঞ্জে সান্দ্রো পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন করে ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। তাতে সাড়া না দিয়ে খেলা চালিয়ে যান রেফারি। পরে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান তিনি। ঠাণ্ডা মাথার স্পট কিকে দলকে আবার এগিয়ে নেন নেইমার।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাড়তে পারত ব্যবধান। নেইমারের কর্নারে সিলভার হেড ক্রসবারে লাগে। ফিরতি বল পেয়ে কাছ থেকে কাসেমিরোর প্রচেষ্টা ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।

৫৩তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ পান লুকাস পাকেতা। নেইমারের পাসে ওয়ান-অন-ওয়ানে তার প্রচেষ্টা কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক। পরক্ষণে সান্দ্রো বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হলে আবারও ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। নিজের ‘ট্রেডমার্ক’ স্পট কিকে দ্বিতীয় গোলটি করেন নেইমার।

জাতীয় দলের হয়ে নেইমারের গোল হলো ৭৩টি। কিংবদন্তি পেলের সর্বোচ্চ ৭৭ গোলের রেকর্ড ছোঁয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন পিএসজি তারকা।

৫৯তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সেভে ব্যবধান ধরে রাখেন ওয়েভেরতন। সনের পাস থেকে ইন-বিওমের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ৩৪ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক।

৭১তম মিনিটে রিশার্লিসনের বদলি নামার একটু পরই সুযোগ পান ভিনিসিউস জুনিয়র। নেইমারের পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ডের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে রাফিনিয়ার জোরাল শট পোস্টে লাগে।

৭৮তম মিনিটে নেইমারের বদলি নামার খানিক পরই জালের দেখা পান কৌতিনিয়ো। ভিনিসিউসের হেড ক্লিয়ার করতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রথম স্পর্শে বল জালে পাঠান কৌতিনিয়ো।

যোগ করা সময়ে ব্রাজিলের পাঁচ নম্বর গোলটি করেন কৌতিনিয়োর সঙ্গেই বদলি নামা জেসুস। ব্রুনো গিমারেসের পাস ধরে ডান দিক দিয়ে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে বক্সে আরেক জনের বাধা এড়িয়ে নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ম্যানচেস্টার সিটির এই ফরোয়ার্ড।

আক্রমণে ব্রাজিলের আধিপত্য স্পষ্ট হয় পরিসংখ্যানেও। পুরো ম্যাচে ৫৯ শতাংশ বল দখলে রেখে গোলের জন্য মোট ২৫টি শট নেয় তারা, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাত শটের ৬টি লক্ষ্যে ছিল।

নিজেদের পরের প্রীতি ম্যাচে আগামী সোমবার জাপানের মাঠে খেলবে ব্রাজিল।