হাতিরঝিলের সৌন্দর্য | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: হাতিরঝিল পাবলিক ট্রাস্ট প্রোপার্টি তথা জনগণের ন্যাস সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি বলে এক রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, হাতিরঝিলের পানি ও এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ সম্পদকে কোনোভাবে ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না। বেগুনবাড়ী খালসহ হাতিরঝিল এলাকা রাজধানী ঢাকার ফুসফুস হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে রায়ে।
চার বছর আগে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক-আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩০ জুন কয়েক দফা নির্দেশনা, পরামর্শসহ ওই রায় দেন। ৫৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পের লে-আউট প্ল্যানের বাইরে অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা নিয়ে ২০১৮ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ওই রিটটি করা হয়।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রায়ে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকাকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রোপার্টি তথা জনগণের ন্যাস সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক।
রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।…দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই। এ পৃথিবী ব্যতীত আর কোনো গ্রহে পানির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে এক ফোঁটা পানি এ পৃথিবীর বাইরে থেকে আনতে সক্ষম হয়নি। অথচ ওই খরচের শতভাগের এক ভাগ টাকা খরচ করলে আমরা আমাদের গ্রহের পানিকে দূষণমুক্ত ব্যবহারযোগ্য রাখতে সক্ষম।’
আদালতের নির্দেশনা ও পরামর্শ
হাতিরঝিলের পানি ও এর নান্দনিক সৌন্দর্য মহামূল্যবান জাতীয় সম্পত্তি উল্লেখ করে এর সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কয়েক দফা নির্দেশনা ও ৯ দফা পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ ও নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন ও তুরাগ নদের রায় অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।
রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ও এখতিয়ারবহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ী সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে রায়ে। অপর পরামর্শে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের শৌচাগার স্থাপন করা বলা হয়েছে।
আদালতের দেওয়া পরামর্শের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা; পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা; পানির জন্য ক্ষতিকর এমন যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা; হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা; হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।
যোগাযোগ করা হলে রাজউকের আইনজীবী ইমাম হাছান বলেন, রাজউকের সঙ্গে আলোচনা করে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।