| ফাইল ছবি |
নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, বাংলাদেশের মতো নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা ১৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালের মধ্যেই নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। ধনী দেশগুলোতে এই হার ১০ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী হাসপাতালে প্রতি ১০টির ১টি মৃত্যু হচ্ছে এই সংক্রমণের কারণে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে ডব্লিউএইচও এ তথ্য দিয়েছে। ৬ মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ডব্লিউএইচও বলছে, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জোরদার কর্মসূচি থাকলে হাসপাতালে সংক্রমণ ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এটি প্রথম প্রতিবেদন বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
ডব্লিউএইচও বলছে, স্বাস্থ্যসেবা–সংশ্লিষ্ট সংক্রমণ এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতার কারণে মানুষের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। মৃত্যু দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যাচ্ছে, যখন সংক্রমণের জন্য দায়ী জীবাণু ওষুধপ্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে সদস্যদেশগুলোকে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হতে বলেছে ডব্লিউএইচও। কী ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পরামর্শ তারা দিয়েছিল। ২০১৭–১৮ সালের তথ্য–উপাত্তের সঙ্গে ২০২১–২২ সালের তথ্য–উপাত্ত তুলনা করে সংস্থাটি বলছে, পরামর্শ খুব একটা কাজে আসেনি।এ ক্ষেত্রে তারা ১০৬টি দেশের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলেছে, ন্যূনতম যে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তা নিয়েছিল মাত্র চারটি দেশ। মাত্র ১৫ দশমিক ২ শতাংশ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ন্যূনতম যে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে।
কোন দেশ কী করছে, তার যে মানচিত্র ডব্লিউএইচও তৈরি করেছে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান মাঝামাঝি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের কর্মপরিকল্পনায় সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আছে, হাসপাতাল ও ক্লিনিকের করণীয় বিষয়ে নির্দেশিকা আছে, নির্দেশিকা বিতরণ করা হয়েছে, কিছু কিছু হাসপাতালে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশে হাসপাতালে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে কোনো তথ্য কোনো দপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, কোনো ব্যক্তি হাসপাতালে এসে নতুন সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন কি না, তা নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয় না। কয়েকটি বড় শহর ছাড়া পরীক্ষার ব্যবস্থাও সারা দেশে নেই। সুতরাং পরিস্থিতি বোঝার মতো, বুঝে উদ্যোগ বা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার মতো তথ্য দেশে নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা বলেছেন, এ বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে সরকারি হাসপাতালে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রস্তুতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তাঁরা এই প্রতিবেদককে দিয়েছেন।
করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের আগস্টে চূড়ান্ত করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ১৮ শতাংশ চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে; সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কমিটি নেই ৪৬ শতাংশ হাসপাতালে; সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ নজরদারি ও তদারকির ব্যবস্থা নেই ৫২ শতাংশ হাসপাতালে। সাবানপানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে। ৩১ শতাংশ হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা বা তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো নির্দেশিকা পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা, হাসপাতাল শাখা এবং কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতাল শাখার এ বিষয়ে পৃথক পৃথক কর্মসূচি আছে।
রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার উপকর্মসূচি ব্যবস্থাপক অনিন্দ্য রহমান বলেন, গত দুই বছরে প্রায় ২৫ হাজার চিকিৎসক ও নার্সকে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা উদ্যোগী হলে সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।