সয়াবিন তেল | ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগের ১৬০ টাকা থেকে লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে দেশে স্মরণকালের মধ্যে সয়াবিনের দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। ক্রেতা-ভোক্তারা এই বাড়তি দামকে অস্বাভাবিক মনে করছেন। একইভাবে সয়াবিন ইস্যুতে নানাভাবে আসছে রাজনৈতিক বক্তব্যও।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সয়াবিন তেলের দাম প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় তো বটেই, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম।

কমোডিটি পণ্যের অনলাইন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ামার্ট ও হিমালমার্টের বরাত দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এ বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে পাকিস্তানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩৬ থেকে ২৩৮ টাকায়। এটা ভারতে ২১৩ থেকে ২২৪ টাকা, নেপালে ১৯৭ থেকে ২১৪ টাকা। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি লিটার একই তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৯৮ টাকা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সোমবার  বলেন, ‘বিশ্ববাজারের ভোজ্যতেলের মূল্য পরিস্থিতি কী তা সবার জানা প্রয়োজন। কারণ আমাদের তুলনায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে তেলের দাম আরও বেশি বেড়েছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভোজ্যতেল একটি আমদানিনির্ভর পণ্য। দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ স্থানীয় উৎপাদন থেকে মেটানো হয়। অবশিষ্ট ৯০ ভাগই আমদানি করতে হয়। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে।’

অবশ্য তিনি স্বীকার করে বলেন, ‘এটা ঠিক, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দেশে সয়াবিনের দাম বেশি। কিন্তু এটা কোন প্রেক্ষাপটে বেড়েছে, তার বাস্তবতা ক্রেতা-ভোক্তাকে অনুধাবন করতে হবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি সয়াবিনের দাম লিটারে ৩৮ টাকা বাড়ায় ক্রেতাদের কিনতে কষ্ট হবে। কিন্তু এটাও বলব, বিশ্বের দেশে দেশে তাকান। কোথায় কোন দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে, দেখুন। বাস্তবতা বুঝুন। সাময়িক সময়ের জন্য কষ্ট হলেও সেটি মেনে নিন। আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে ভোজ্যতেলের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে এবং বাজারে যাতে তেলের কোনো ঘাটতি না হয়, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে।’

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে এলে দেশেও দাম দ্রুত সমন্বয় করে কমিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, রান্নার অন্যতম উপকরণ ভোজ্যতেল (সয়াবিন) নিয়ে অস্বস্তি চলছে দেশে দেশে। বিশ্বে যত তেল ব্যবহার হয়, তার ৬০ শতাংশই জোগান দেয় সয়াবিন। দীর্ঘমেয়াদি করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন সয়াবিনের সরবরাহে মারাত্মক টান পড়েছে। আবার এর অন্যতম সরবরাহকারী এলাকা ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোয় খরার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। একই অবস্থা অন্যান্য সরবরাহকারী দেশেরও। এতে একদিকে সার্বিক উৎপাদন ও সরবরাহ কমছে, অপরদিকে বাড়ছে চাহিদা। কিন্তু সে অনুযায়ী এই তেল বাজারজাত হচ্ছে না।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারকদের বিপুল পরিমাণ এলসির চাপ থাকার কারণে সরবরাহকারী দেশগুলোকে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। আবার তারাও বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিচ্ছে। এতে ক্রমাগত চড়ছে সয়াবিনের দাম। একসময়ের ৬০০ মার্কিন ডলারের প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০০ ডলারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের এ ঊর্ধ্বগতির প্রভাব পড়ছে দেশে দেশে।