কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধের মুখে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুর বিভাগসহ পুরো উত্তরবঙ্গ বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সংকট সমাধানে জ্বালানি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলেও তা তেমন কাজে আসবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন সাড়ে তিন মাসের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক মাসিক সমন্বয় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ২৪ এপ্রিল মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহাবুব হাসান।

সচিব সভায় কয়লা ও পাথর উত্তোলন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। মজুত কয়লা দিয়ে আপদকালীন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার দিকে নজর রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।

বৈঠকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘বর্তমানে খনির ১৩১০ ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে, যা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে। নতুন ফেস ১৩০৬ এ শিফট করতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় প্রয়োজন হবে। এলসি খোলার জটিলতার কারণে মালামাল আমদানি কিছুটা পিছিয়ে যাওয়ায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস কয়লা উৎপাদনে গ্যাপ তৈরি হবে।’

সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘পিডিবিকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও পরিচালক (অপারেশন) সাইট ভিজিট করে চাইনিজদের সঙ্গে গ্যাপ কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাইনিজরা আরো ৫০ হাজার টন কয়লা অতিরিক্ত উত্তোলন করেছে। সে সুবাদে ১৫ দিনের গ্যাপ কমানো সম্ভব হয়েছে।’

পিডিবির কাছে আগে থেকে দুই লাখ বিশ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। এই মজুত দিয়ে কয়লা উৎপাদন বন্ধের সময়টাতে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সভায় সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম  বলেন, ‘গত ১ মে পুরনো ফেজের কয়লা শেষ হয়ে গেছে। এরপর নতুন ফেজ থেকে কয়লা তুলতে সম্ভাব্য সময় হিসেবে আমরা ১৫ আগস্ট নির্ধারণ করেছি।

‘আমাদের এখানে দুটি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। একটি খনির কাছে, অন্যটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে। দুই ইয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টন কয়লা মজুত আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন দুই হাজার টন কয়লার ব্যবহার করা হলে এই মজুত দিয়ে ১০০ দিন যাওয়ার কথা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিকল্পিতভাবে কয়লা ব্যবহার করা হলে সংকট হওয়ার কথা নয়।’

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে হিসাব কষে কয়লা খরচের অনুরোধ করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। খনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধ না মানলে উত্তরের জনপদে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিতে পারে।’

এদিকে পিডিবি সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি অর্ধেক উৎপাদন করলেও প্রতিদিন তিন হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। প্রতিদিন দুই হাজার টনের বেশি কয়লা কেন্দ্রটি ব্যবহার করলেই কয়লা উৎপাদন শুরুর গ্যাপের শেষের দিকে গিয়ে বিপাকে পড়তে হবে। কোনো কারণে ফেজ পরিবর্তনে ধারণার বেশি সময় লেগে গেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হবে। আর তাহলে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

পিডিবি সূত্র বলছে, দেশের অন্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও উত্তরাঞ্চলে তা নেই। ওই অঞ্চলে চাহিদার তুলনায় এখনও বিপুল পরিমাণ বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। ফলে অন্য এলাকা থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গেলেও লো-ভোল্টেজ সৃষ্টি হয়।