চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার জশইল চালনা খাঁড়ির ওপর নির্মিত মাটির রাস্তাটি ভেঙে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। রোববার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা পুনর্ভবা নদীর পানির তোড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার জশইল চালনা খাঁড়ির ওপর নির্মিত মাটির রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এতে সিংগাবাদ পাথার বিল এলাকার কয়েক হাজার কৃষক কাটা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় প্রায় দেড় লাখ মণ ধান খাঁড়ির অন্যপ্রান্তে আটকে আছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০ মে নদীর পানির তোড়ে খাঁড়ির ওপর নির্মিত মাটির রাস্তাটি ভেঙে যায়। পাথারের অন্যপাশে ছয়টি মৌজার আট হাজার বিঘা জমিতে ধান হয়। ধান কাটার পর মাটির রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টর দিয়ে ধান নিয়ে আসা হতো। মাটির রাস্তাটি ভেঙে যাওয়ায় এখন কৃষকেরা বিকল্প পথে বা নৌকা করে পার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কৃষকেরা বলছেন, খাড়ির ওপর ৫০০ ফুট রাস্তার অভাবে প্রায়ই তাঁদের এমন সমস্যায় পড়তে হয়।
রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের সিংগাবাদ পাথার এলাকায় গতকাল রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বুকপানি মারিয়ে খাঁড়ি পার হচ্ছে কৃষক ও শ্রমিকেরা। কেউ কেউ মাথায় ধানের বস্তা নিয়ে খাঁড়ির এ পাড়ে আসছেন। বেশির ভাগ ধান নৌকাতে করে খাঁড়ির পাশের জমিতে এনে স্তূপ করা হচ্ছে। এরপর সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে পরিবহন করা হচ্ছে।
নৌকায় করে ওপারে গিয়ে দেখা যায়, শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর চামাবাজার এলাকার ২০ জন ধানকাটা শ্রমিক মজুরির ২০০ মণ ধান নিয়ে আটকে আছেন। তাঁদের মধ্যে উত্তম কর্মকার (৩৫) বলেন, ‘আমাদের এলাকার ২০ জন শ্রমিক ১৬ দিন ধরে ধান কেটে মজুরি হিসেবে ৪০০ মণ ধান পেয়েছি। ২০০ বস্তায় ভরে প্রায় চার কিলোমিটার দূর থেকে ট্রাক্টরে করে খাঁড়ির এপারে নিয়ে এসেছি। ভাড়া লেগেছে ১২ হাজার টাকা। আবার নৌকা দিয়ে ওপারে নিয়ে যেতে বস্তাপ্রতি লাগবে ২৫ টাকা করে। এরপর আবার ট্রাক্টরে করে ধান বাড়ি নিয়ে যেতে হবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে। যেখানে বাড়িতে ধান নিয়ে যেতে জনপ্রতি খরচ হতো ১ হাজার ২০০ টাকা করে। সেখানে এবার লাগবে তিন হাজার টাকারও বেশি। এতে করে এবার আমাদের মোটেও পড়তা হবে না। বরং ক্ষতিই হলো। মজুরির এ ধান জমা রেখে আমরা ঘরের চালের চাহিদা মিটাই। এবার ধান বেচতে হবে।’
এলাকার দুজন কৃষক বলেন, ঢলে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ২৫০ বিঘা জমির ধানও ডুবে গেছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান নূহ বলেন, পাথারের অন্যপারের রামেশ্বরপুর, সুন্দরপুর ও অনন্তহাকিলাসহ ছয়টি মৌজার প্রায় আট হাজার বিঘা জমির দেড় লাখ মণ ধান পরিবহন অসুবিধার কারণে আটকে আছে। রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাড়ে সাত হাজার কৃষক ও শ্রমিক।