পর্যটন বিকাশে নেই নীতিমালা

বর্ষার আগেই ঢলের পানিতে টইটম্বুর হাওর। নতুন পানি আসায় পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ: জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ছুটে আসেন হাওরে। তবে পর্যটন বিকাশে সম্ভাবনা থাকলেও নেই নীতিমালা। অনুন্নত যোগাযোগ, নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অবকাঠামো না থাকায় অনেকখানিই পিছিয়ে রয়েছে এ স্থানটি। ফলে তাহিরপুরে পর্যটকদের সুবিধার্থে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশন।

প্রতি বর্ষায় হাজারো পর্যটক হাওরে নৌকা করে ঘুরে বেড়ান। অনেকে আবার রাতযাপনও করেন নৌকায়। এবার বর্ষার আগেই উজানের ঢলে হাওরে আগাম পানি চলে এসেছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের আশপাশে পানি থই থই করছে। এই সুযোগ নিচ্ছেন পর্যটকেরা। তাঁরা নৌকার মালিকদের নীতিমালার মধ্যে আনার দাবি জানান।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক হিমেল বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষায় এখানে আসি। তবে এবার বর্ষার আগেই ঈদের ছুটি পেয়ে চলে এলাম। তবে বর্ষা আসার আগেই যদি নৌকার মাঝি ও মালিকদের একটি নীতিমালার মধ্যে আনা হয় তাহলে পর্যটকদের নৌকা ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষি করতে হবে না।’

তাহিরপুরে ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় পর্যটকেরা থাকেন নিরাপত্তাহীনতায়। এ ছাড়া হাওরে বেড়াতে গিয়ে আবাসন ও স্যানিটেশনসহ নানান সমস্যা রয়েছে। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা পড়েন চরম বিপাকে।

টাঙ্গুয়ার হাওর ছাড়াও তাহিরপুরে রয়েছে বারেকটিলা, জাদুকাটা নদী, শহীদ সিরাজ লেক ও শিমুলবাগানসহ একাধিক পর্যটনকেন্দ্র। এসব দর্শনীয় স্থানকে কেন্দ্র করে গত এক যুগেরও বেশি সময়ের ব্যবধানে ওইসব স্থানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা।

এদিকে তাহিরপুর ছাড়াও পর্যটক আকৃষ্টে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার হাওর বিলাস ও পাহাড় বিলাস নামের দুটি স্থান। বিশ্বম্ভরপুরের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সলুকাবাদ ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মথুরকান্দি এলাকায় পাহাড় বিলাস নামের জায়গাটিকে নানা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। নিরাপত্তায় সাঁটানো হয়েছে সিসিটিভি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা। পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য রয়েছে রেস্তোরাঁ। তবে এসব এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থাও অত্যন্ত নাজুক।

হবিগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক নাসিম আহমদ বলেন, ‘সুনামগঞ্জের প্রকৃতি অনেক সুন্দর। তবে যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ। যাতায়াত ব্যবস্থা আরও উন্নত করা গেলে পর্যটনশিল্পের দিকে সুনামগঞ্জ অনেক এগিয়ে যাবে।’

সিলেট থেকে আসা আরেক পর্যটক এমরান হোসেন বলেন, ‘তাহিরপুরে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারি না। তবে দেশের অনেক পর্যটন এলাকা থেকে তাহিরপুরের সৌন্দর্য ব্যতিক্রমী। এখানে বিশাল জলাভূমির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করা যায়।’

তবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাক্ষাৎকারে সুনামগঞ্জের পর্যটন নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, গত বছরের শেষের দিকে একনেকে অনুমোদন হয়েছে হাওরাঞ্চলে উড়াল সড়কের। এই উড়াল সড়ক বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন হাওরের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে অন্যদিকে হাওরভিত্তিক পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, উড়াল সড়কটির কাজ দ্রুত শুরু হবে। পর্যটন বিকাশের জন্য অনেক কার্যক্রম এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে বেসরকারিভাবে হোটেল-মোটেল তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে একটি রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

বর্ষায় নৌকার নীতিমালা নিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সামনে বর্ষায় হাজারো পর্যটক আসবেন। তখন নৌকা দিয়েই সাধারণত পর্যটকেরা ভ্রমণ করে থাকেন। আমরা নৌকার মালিক ও মাঝিদের নিয়ে বৈঠক করব যাতে করে কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার না হন।’