রাজশাহীতে চার প্রতিষ্ঠানে অভিযানে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার

সয়াবিন তেলের দাম বেশি নেওয়ায় মঙ্গলবার রাজশাহী সাহেব বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহী প্রতিনিধি: পাঁচ দিন আগেও বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৩৬ টাকা। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গত শনিবার থেকে সে তেলের দাম ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা। এখন তা ১৯৮ টাকা। তেলের বোতলের গায়ের দামের চেয়ে অতিরিক্ত দাম রাখলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে। সে জন্য রাজশাহীর এক ব্যবসায়ী বেছে নিয়েছেন প্রতারণার অভিনব এক পদ্ধতি। তিনি ১৬০ টাকা লিটারের বোতলজাত তেল ড্রামে ঢেলে খোলা তেল হিসেবে ১৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

এ ঘটনায় রাজশাহী নগরীর বহরমপুর এলাকায় মেসার্স নুরুন্নবী ট্রেডার্সে অভিযান চালিয়ে দোকানমালিক মো. নুরুন্নবীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. হাসান-আল-মারুফ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ অভিযান চালান তিনি।

হাসান-আল-মারুফ বলেন, দুপুরে তাঁরা নগরের বহরমপুর এলাকায় মেসার্স নুরুন্নবী ট্রেডার্সে যান। সেখানে এর আগেও বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির দায়ে একবার সতর্ক করা হয়েছিল। এবার ভোক্তা অধিকারের গাড়ির চালককে দিয়ে সেখান থেকে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেল কেনেন। এতে দোকানের মালিক মো. নুরুন্নবী দাম রাখেন ১৮৫ টাকা। যদিও বাজারে খোলা তেল ১৮০ টাকায় বিক্রির কথা। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেন, ১৬০ টাকা লিটারের বোতল খুলে সেই তেলকে ১৮৫ টাকায় খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছিলেন ব্যবসায়ী নুরুন্নবী।

এ ছাড়া দোকানের গুদামে ১৩২ লিটার সয়াবিন তেল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগে এক দোকানদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা হাসান-আল-মারুফ। তিনি জানান, নগরের সাহেববাজার এলাকায় মেসার্স হুমায়ুন স্টোরে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল মজুত আছে বলে তাঁদের কাছে গোপন খবর ছিল। পরে বেলা ১১টায় সেখানে গিয়ে অভিযান চালানো হয়। দোকানের গুদামে ১৬০ টাকা বোতলের দামের ১৩২ লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। পরে দোকানের মালিক হুমায়ুন কবীরকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ তেলের বোতলগুলোর বেশির ভাগ সেখানেই জনতার মধ্যে বিক্রি করা হয়।

অভিযান শেষ করার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা হাসান-আল-মারুফ দেখতে পান, শোভন দাস নামের এক ব্যক্তি পাঁচ লিটারের এক বোতল সয়াবিন তেল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। কৌতূহলবশত তিনি দাম জানতে চান। শোভন দাস পাঁচ লিটারের বোতল ৯৮৫ টাকা দিয়ে কিনেছেন বলে জানান। তবে সে বোতলের গায়ে পুরোনো দাম ৭৬০ টাকা লেখা ছিল। পরে মেসার্স পাপ্পু অ্যান্ড ব্রাদার্সের দোকানে গিয়ে এর সত্যতা মেলে। এ জন্য দোকানের মালিক নজরুল ইসলামকে ভোক্তা অধিকার আইনের ৪০ ধারা অনুযায়ী ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

হাসান-আল-মারুফ বলেন, তাঁরা অভিযানকালে ভোক্তাদের সতর্কও করছেন। যাতে তাঁরা বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে পণ্য না কেনেন এবং জোর করলে যেন তাঁদের খবর দেওয়া হয়। এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

এর আগে গতকাল সোমবার রাতে জেলা পুলিশের অভিযানে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের দুটি তেলগুদাম থেকে মোট ২৬ হাজার ৭২৪ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে খোলা সয়াবিন ছিল ১৯ হাজার ২২৪ লিটার, আর শর্ষের তেল ছিল ৭ হাজার ৫০০ লিটার। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।