ঘন কচুরিপানায় ইছামতী নদীর পানি কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা সেখানে গোসল করছেন। সম্প্রতি সাঁথিয়া পৌর এলাকার সাঁথিয়া বাজার ঘাট এলাকায় | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি পাবনা: পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলায় ইছামতী নদীর পানি কচুরিপানার কারণে দূষিত হচ্ছে। বিকল্প উপায় না থাকায় নদী-তীরবর্তী বাসিন্দারা গৃহস্থালিসহ নানান কাজে বাধ্য হয়ে নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করছে। এতে অন্তত ২৫টি গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কচুরিপানার কারণে পানি পচে যাওয়ায় নদীটি মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তা ছাড়া এ পানি ব্যবহার করায় অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে পাবনা সেচ ও পল্লি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে ইছামতী নদীকে প্রধান সেচখালে রূপান্তরিত করা হয়। সেচখাল হলেও ইছামতীপারের অসংখ্য মানুষ গোসলসহ গৃহস্থালির নানা কাজে এর পানি ব্যবহার করে আসছিল। কিন্তু ঘন কচুরিপানা জন্মানোয় সাত থেকে আট বছর ধরে গৃহস্থালির কাজে এর পানি আগের মতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শুধু তা-ই নয়, কচুরিপানার কারণে ইছামতীতে নৌচলাচলও বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে কচুরিপানা পচে যাওয়ায়। এতে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধে একদিকে বসবাস যেমন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি এই পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজননক্ষেত্রে।
ইছামতী নদীর ৪২ কিলোমিটার পাবনা সেচ ও পল্লি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়া উপজেলার চরপাড়া গ্রাম থেকে শুরু করে সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশজুড়ে জন্মেছে ঘন কচুরিপানা। কচুরিপানার কারণে কোথাও পানি দেখার উপায় নেই। গৃহস্থালি কাজের প্রয়োজনে এলাকাবাসী কোনো কোনো স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে কচুরিপানা ঠেকিয়ে সামান্য জায়গা বের করলেও সেই পানি কালো বর্ণের দুর্গন্ধযুক্ত।
সাঁথিয়ার তলট গ্রামে কচুরিপানা সরিয়ে গোসল করতে দেখা যায়, ১৫ থেকে ২০ জনকে। সেখানে কাপড় ধুতে ও গোসলের জন্য এসেছিলেন গ্রামের লুৎফা বেগম। তিনি বলেন, আগে এই পানিতেই রান্না ও গৃহস্থালির কাজ চলত। কিন্তু পানি এত গন্ধ হয়ে গেছে যে কাপড়চোপড় ধোয়াও খুব মুশকিল।
সাঁথিয়ার গোপালপুর গ্রামের কলেজশিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, এই পচা পানির কারণে চর্মরোগের পাশাপাশি মশার উৎপাত ব্যাপক বেড়েছে। দিনেও মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।
স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, থেকে শুরু করে নীতিমালা অনুযায়ী সেচখালের যাবতীয় ভাসমান ও ভেতরের আগাছা পরিষ্কার রাখা আবশ্যক। সেই হিসাবে সেচখাল চালু হওয়ার প্রথম দিকের বেশ কয়েক বছর পাউবোর পক্ষ থেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হতো। কিন্তু সাত-আট বছর ধরে পাউবো এ খাতে বাজেট না থাকার অজুহাত দেখিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে।
পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, ‘প্রয়োজনীয় অর্থ না পাওয়ায় কচুরিপানা সরানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে এ-সংক্রান্ত অর্থ বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের শুরুতে এ ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ হতে পারে বলে শুনতে পাচ্ছি। বরাদ্দ পাওয়ামাত্রই কচুরিপানা অপসারণের কাজ শুরু হবে।’