মেলার অন্যতম আাকর্ষণ ছিল বিভিন্ন আকারের মিষ্টি। গতকাল শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড়ে ছবি: প্রতিনিধি

প্রতিনিধি বগুড়া: করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দীর্ঘ দুই বছর পর সাধু-সন্ন্যাসী আর বাউলদের উপস্থিতিতে জমে উঠেছিল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের বৈশাখী উৎসব ও পুণ্যার্থী মেলা। প্রতিবছরের মতো এবারও বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার সাধু-সন্ন্যাসী আর পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছিল মহাস্থানগড় হজরত শাহ সুলতান বলখীর (র.) মাজার এলাকায়। বাউলদের মারফতি আর জারি–সারি গানে জমজমাট ছিল এবারের উৎসব।

বৃহস্পতিবার সারা দিন কাঁসা ও ঢাকঢোলের মতো যন্ত্রের বাজনায় প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুন্ড্রনগর মুখরিত ছিল। উৎসবে অংশ নিতে বগুড়া ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধু-সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীরা এখানে এসেছিলেন। মেলায় ছিল মিষ্টান্ন আর হরেক পদের খেলনা ও প্রসাধনের পসরা। পাশাপাশি মহাস্থানের প্রসিদ্ধ কটকটির দোকান তো ছিলই।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থানগড়ে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। মেলার কয়েক দিন আগে থেকেই মহাস্থানগড়সহ আশপাশের এলাকায় উৎসবের ধুম পড়ে যায়। তবে করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব বন্ধ ছিল।

মহাস্থানগড় এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ঐতিহাসিক এই উৎসবের গোড়াপত্তন সর্ম্পকে কারও সঠিক ধারণা নেই। তবে বংশপরম্পরায় কয়েক শ বছর ধরে এখানে বার্ষিক এই উৎসব আয়োজন হয়ে আসছে। লোকমুখে শোনা যায়, মহাস্থানগড়ের এই মাজারে বসেই ইংরেজদের হটাতে ফকির বিদ্রোহ পরিচালনা করেছিলেন ফকির মজনু শাহ। একপর্যায়ে তিনি বিজয়ীও হয়েছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফকিরি বিদ্রোহকে স্মরণীয় করে রাখতেই বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই উৎসব আয়োজন হয়ে আসছে। এ কারণেই উৎসবে শত শত ফকির-সন্ন্যাসীদের আগমন ঘটে। এটা আসলে ফকির-সন্ন্যাসীদের মেলা।

মেলায় আসা শিশুদের জন্য দোকানিরা বিভিন্ন খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন |
স্থানীয় ব্যবসায়ী আইফল ইসলাম বলেন, এই উৎসব ঘিরে প্রচুর পরিমাণে কটকটি বেচাকেনা হয়। এ কারণে ব্যবসায়ীরা বছরের একটি দিনে ভালো ব্যবসার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব আয়োজিত না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা হাতগুটিয়ে বসে ছিলেন। এ ছাড়া গত উৎসবের সময় মাদকসেবনের মতো কিছু অসামাজিক কর্মকাণ্ড উৎসবের ঐতিহ্যকে কিছুটা ম্লান করেছিল। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় এবার এই উৎসব আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

বগুড়ার সুকুমার বাউল বলেন, এই উৎসব হলো সাধু-সন্ন্যাসীদের মিলনমেলা। মহাস্থানগড়ের এই উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ফকির–বাউলেরা গুরুকে ভক্তি জানাতে আর আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য বছরে এক দিন এখানে সমবেত হন। কিন্তু বিগত সময়ে বাউল-সন্ন্যাসীদের হয়রানিসহ নানা কারণে এখানে লোকসমাগম আগের চেয়ে কমেছে।