ভারত জানালে পি কে হালদারের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান | ছবি: ফেসবুক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে আর্থিক খাতে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তার করার বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে ভারত জানালেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ কথা বলেন। ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

 স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পি কে হালদার বাংলাদেশের ওয়ান্টেড। বাংলাদেশ সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) ও তাঁর চার সহযোগীকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। পি কে হালদারের সহযোগীদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তাঁকে ইডির হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পি কে হালদারের প্রাসাদসম বাড়িসহ অনেক সম্পদের সন্ধান পায় ইডি। সংস্থাটি পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের সম্পদের সন্ধানে গত দুই দিনে অন্তত ১০টি স্থানে অভিযান চালিয়েছে। প্রধানত আর্থিক কেলেঙ্কারি, বেআইনিভাবে ভারতে অর্থ পাঠানো, বিদেশে অর্থ পাচার ও আইনবহির্ভূত সম্পত্তির বিষয়ে তদন্ত করছে ইডি। অবশ্য এ পর্যন্ত কতগুলো বাড়ি, জমি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের হদিস পাওয়া গেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা যায়নি।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদার বাংলাদেশে আর্থিক খাতের শীর্ষ দখলদার ও খেলাপিদের একজন। ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান, পরে কানাডায় পাড়ি জমান।

ভারতের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ ও বসবাস, বেনামে সম্পত্তি কেনা ও আইনবহির্ভূতভাবে অর্থ বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা—এসব অভিযোগে পি কে হালদার ও তাঁর পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট বা অর্থ পাচার আইনের ওপর। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদারের ব্যবসা দেখাশোনা করা তাঁর ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার আছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইডি বলছে, পি কে হালদার নিজেকে শিবশংকর হালদার পরিচয় দিয়ে ভারতের একাধিক সরকারি পরিচয়পত্র, যেমন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, আয়কর দপ্তরের পরিচয়পত্র পিএএন বা প্যান, নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড ইত্যাদি জোগাড় করেছিলেন। পি কে হালদারের সহযোগীরাও একই কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে ইডি।

ইডি গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই পরিচয়পত্র দিয়ে পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় সম্পদ কিনেছিলেন। কলকাতার কিছু অভিজাত এলাকায়ও তাঁদের বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। ইডি বাংলাদেশের তিন নাগরিক পি কে হালদার, প্রীতিশ কুমার হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাঁদের কয়েক সহযোগীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে। পি কে হালদার বাংলাদেশে বহু কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত বলেও ইডি জানিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাটির ভাষ্য, এই টাকার বিরাট অংশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাঠানো হয়েছে।