সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। শনিবার সমিতির কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলেন, তাঁরা মজুতদার নন। বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। অভিযান চালানোর সময় তাঁদের তেল কেনার কোনো কাগজপত্র দেখা হয়নি। বাজারের ব্যবসায়ীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বানেশ্বর বাজার থেকে চার ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার ও প্রায় ৯৩ হাজার লিটার তেল জব্দ করার ঘটনায় ব্যবসায়ীরা শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন।

১০ মে বানেশ্বর বাজার থেকে ব্যবসায়ী বিকাশ কৃষ্ণ সরকার, শৈলেন কুমার পাল, ইমাদদুল হক, রাজীব সাহা নামে চার ব্যবসায়ী ও ট্রাকচালক মোহাম্মদ লিটনকে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়। চার ব্যবসায়ীর গুদাম ও চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী ট্রাক থেকে মোট ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়। এর প্রতিবাদে বানেশ্বর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ করেছেন।

আজ বানেশ্বর ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এতে বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যবসায়ীরা এই বাজারে ৫০ থেকে ৮০ বছর ধরে বৈধভাবে ব্যবসা করে আসছেন। তাঁদের মধ্যে একজন গত বছর রাজশাহীর সেরা করদাতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের অবিলম্বে মুক্তি, জব্দকৃত তেল ফেরত দিয়ে ও ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি বিধি অনুয়ায়ী একজন ব্যবসায়ী পাইকারি পর্যায়ে ১৫০ ড্রাম তেল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত মজুতের অধিকার রাখেন। অথচ তেল মজুতের নামে যেসব ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের গুদামে সয়াবিন ও পাম তেল ১ মে থেকে ৮ মে তারিখের এর মধ্যে কেনা। ১০ মে অভিযানের দুই দিন আগে এক ব্যবসায়ী সয়াবিন কিনেছেন। এ–সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ব্যবসায়ীদের কাছে ছিল। তাঁরা যে দামে কিনেছেন সেই দামের সঙ্গে খুব সামান্য মুনাফা রেখে বিক্রি করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করেননি। এমনকি রাস্তার ওপর রাখা ট্রাক থেকেও তেলের ড্রাম জব্দ করা হয়। তেলের সঙ্গে থাকা চালানপত্র পুলিশকে দেখাতে চাইলেও তাঁরা দেখেননি।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এই চার ব্যবসায়ী আশপাশের চারটি জেলার ১০টি উপজেলায় তেল সরবরাহ করে থাকেন। তেলের সংকটকালেও তাদের কাছে যাঁরাই তেল নিতে এসেছেন খালি হাতে ফেরত যাননি।

ওই চার ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারের পর আশপাশের উপজেলায় তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে মানুষের দৈনন্দিন কাজে, হোটেল রেস্তোরাঁ, ডাল মিলসহ অন্যান্য কাজে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁরা মজুতদার বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে নয়। তবে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এ ব্যাপারে পুলিশকে আরও সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার হলে তাঁরা তেল আমদানির প্রতি আগ্রহ হারাবেন। এতে নতুন করে রাজশাহীতে তেলের সংকট দেখা দেবে।

বানেশ্বর বাজার সমিতির সভাপতি জুবায়ের মণ্ডল, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, বণিক সমিতির সদস্য রাকেশ কুমার পালসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।