পি কে হালদারের পৈতৃক বাড়ির শূন্য ভিটা। রোববার দুপুরে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন


প্রতিনিধি পিরোজপুর: বসতঘরের মেঝের দেয়ালটি এখনো টিকে আছে, তবে ওপরে কোনো কাঠামো নেই। আছে কেবল আগাছা আর শেওলা। পেছনের দিকে থাকা টিনের রান্নাঘরটি পরিত্যক্ত।

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেল। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামে পি কে হালদারের বাড়ি।

প্রতিবেশী আর আত্মীয়রা জানালেন, ভিটার ওই জমি আর টিনের পরিত্যক্ত ঘরটি ছাড়া গ্রামে পি কে হালদারদের কোনো সম্পদ নেই। বাবার আড়াই একর ফসলের জমি আর ভিটায় থাকা বসতঘরটি বিক্রি করে গ্রাম ছাড়েন পি কে হালদারের মা ও ভাইয়েরা।

প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার  | ফাইল ছবি
প্রতিবেশী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিঘিরজান গ্রামের প্রয়াত প্রণনেন্দু হালদার ও মা লীলাবতী হালদারের তিন ছেলের মধ্যে পি কে হালদার বড়। তাঁর বাবা ছিলেন পেশায় দরজি আর মা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পি কে হালদারের পড়াশোনার শুরু স্থানীয় দিঘিরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দিঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পি কে হালদার ও তাঁর ছোট ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে দুজনই ব্যবসায় প্রশাসনের আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। পি কে হালদারের মেজ ভাই প্রাণেশ কুমার হালদার এসএসসি পাস করে ভারতে চলে যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ২০ বছর আগে লীলাবতী হালদার নাল জমি (ফসলের খেত) ও বসতঘরটি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্য দেশের আর্থিক খাতে আলোচিত নাম পি কে হালদার। গতকাল শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) পি কে হালদার ও তাঁর পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করায় নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।

রোববার দুপুরে নাজিরপুর উপজেলার দিঘিরজান গ্রামের হালদারবাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, হালদারবাড়িতে সাতটি পরিবার বসবাস করছে। বাড়ির লোকজন নিম্নমধ্যবিত্ত। পি কে হালদারের পৈতৃক ভিটা শূন্য পড়ে আছে। মেঝের চারপাশের দেয়ালে শেওলা ধরেছে। ভিটার ওপর জন্মেছে আগাছা। টিনের রান্নাঘরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

পি কে হালদারের চাচাতো ভাই প্রয়াত শশাঙ্ক হালদারের স্ত্রী আলো হালদার (৬০) বলেন, ‘আমি যখন এ বাড়িতে বধূ হয়ে আসি, তখন প্রশান্তর বয়স ১৬ বছর। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করত শুনেছি। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। ২০ বছর আগে বসতবাড়ি ছাড়া সব সম্পত্তি বিক্রি করে তার মা লীলাবতী হালদার মেজ ছেলে প্রাণেশের কাছে চলে যান। এরপর আর প্রশান্ত বাড়িতে আসেনি।’

আলো হালদার তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই উল্লেখ করে বলেন, ‘ভারতে সে গ্রেপ্তারের খবর টিভিতে দেখেছি। প্রশান্তকে (পি কে হালদার) আমি যেভাবে দেখেছি, তাতে মনে হয়নি সে এ ধরনের কাজ করতে পারে। এর পেছনে অন্য মানুষ আছে।’

প্রতিবেশী সুবোধ চন্দ্র বড়াল বলেন, ২০০২ বা ২০০৩ সালে পি কে হালদার একবার বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে এটাই ছিল সর্বশেষ দেখা। ওই সময়ে তাঁর মা বসতঘরটি ও ফসলের নাল জমি বিক্রি করে ভারতে চলে যান। হাজার কোটি টাকার মালিক পি কে হালদারের পৈতৃক ভিটার এমন হাল দেখে অনেকেই অবাক হন। দেশের বাইরে প্রচুর সম্পদ করলেও গ্রামে পৈতৃক ভিটা ছাড়া পি কে হালদার ও তাঁর পরিবারের কোনো সম্পদ নেই।

দিঘিরজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মঞ্জুশ্রী মৈত্র বলেন, ‘প্রশান্ত আমার সরাসরি ছাত্র। তার মায়ের সঙ্গে আমি শিক্ষকতা করেছি। ছোটবেলা থেকে ওরা তিন ভাই মেধাবী ছাত্র ছিল। ছাত্রের এমন খবর আমাকে ব্যথিত করে।’