শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলছে লঞ্চ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

ধারণক্ষমতার দুই–তিন গুণ যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথ লঞ্চ চলাচল করছে। শুক্রবার সকালে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি শরীয়তপুর: শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-জাজিরা নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে লঞ্চে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। চাপ বাড়ায় লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করছে। ধারণক্ষমতার দুই-তিন গুণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো চলছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে বাসে শিমুলিয়া এসে পদ্মা নদী পারি দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। পারাপার হতে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের জাজিরার সাত্তার মাদবর–মঙ্গল মাঝির ঘাট ব্যবহার করা হয়। এ দুটি নৌপথে বর্তমানে ৮৭টি লঞ্চ ও ১৫৩টি স্পিডবোট চলাচল করছে। ঈদের এ সময় ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নৌপথে যাত্রী পারাপার করবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটি ঘোষণা করা হয়। আজ সকাল থেকে মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। সকাল থেকেই নৌপথের ঘাটগুলোতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। নৌপথ দুটিতে যে লঞ্চগুলো চলাচল করছে, তাতে যাত্রীর ধারণক্ষমতা দিনে ১১৫ থেকে ২২০ জন। আর রাতে ৫০ থেকে ১৪০ জন। কিন্তু লঞ্চগুলো ধারণক্ষমতার দুই-তিন গুণ যাত্রী তুলছে।

 শুক্রবার সকালে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে ভেরানো হয় প্রিন্স অব মেদেনী মন্ডল ও এমভি শ্রেষ্ঠ-১ লঞ্চ দুটি। মেদেনী মন্ডলের যাত্রী ধারণক্ষমতা ১৪৫, আর শ্রেষ্ঠ-১–এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ১১৫ জন। কিন্তু দুটি লঞ্চেই চার শতাধিক করে যাত্রী আনা হয়েছে।

ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী কেন ওঠানো হয়েছে, জানতে চাইলে প্রিন্স অব মেদেনী মন্ডল লঞ্চের মাস্টার (চালক) নয়ন মিয়া বলেন,‘শিমুলিয়া ঘাটে পন্টুনে লঞ্চ নোঙর করার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি লঞ্চে উঠে যায়। আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। তখন আর গুনে যাত্রী তোলার অবস্থা থাকে না।’ 

শ্রেষ্ঠ-১ লঞ্চের চালক নুরুল হক ঢালী বলেন,‘আমি যে লঞ্চটির চালক, সেটির কাগজপত্রে ধারণক্ষমতা ১১৫ যাত্রীর। কিন্তু যাত্রী উঠানো যায় ৩০০–৩৫০ জন। তাতে কোনো অসুবিধা হয় না। ১১৫ যাত্রী নিয়ে চলাচল করলে কি খরচ উঠবে? তাই খরচ পোষাতে কাগজে লেখা ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী তুলতে হয়। আর ঈদের সময় মানুষের চাপ বেশি থাকে। তখন এমনিতেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’

 ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী দিদার হোসেন গোপালগঞ্জের মুকসেদপুর যাওয়ার জন্য লঞ্চে করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটে এসেছেন। তিনি  বলেন, ‘পরিবারের শিশু ও নারী সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে চড়েছি। তাঁরা বলেছিলেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করবেন না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দেখলাম লঞ্চ ভরে গেল। নেমে যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই লঞ্চে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পার হলাম।’

 বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার ঘাটের পরিবহন পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত কোনো নৌযান নামানো হয়নি। ৮৭টি লঞ্চ ও ১৫৩টি স্পিডবোট দিয়ে তাদের পদ্মা নদী পার করা হচ্ছে। শিমুলিয়া ঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী যাত্রীদের অনেক চাপ। তাঁরা জোর করে লঞ্চে উঠে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসন, র‍্যাব, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড কাজ করছে। তারপরও মানুষ লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী হচ্ছেন। দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পাশাপাশি যাত্রীদেরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।’