মেট্রো রেলের পরীক্ষামূলক চলাচল | ফাইল ছবি |
আবু কাওসার, ঢাকা: গত দুই বছরে করোনার কারণে উন্নয়ন বাজেট বা এডিপির আকার কিছুটা সংকুচিত করে সরকার। ওই সময় এডিপির আকার ৪ থেকে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। মূলত কাঙ্খিত রাজস্ব আয় না বাড়ায় উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছুটা লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া করোনার কারণে এডিপির বাস্তবায়নও ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়।
এবার ভিন্ন চিত্র। অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ায় এডিপি আগের ধারায় ফিরেছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আগের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি প্রস্তাব করা হচ্ছে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্পদ কমিটি আগামী বাজেটের জন্য এডিপির প্রস্তাবিত আকার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছে। এটা ধরেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় নতুন এডিপির খসড়া তৈরি করছে, যা আগামী মে মাসের ১৭ অথবা ১৯ তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় অনুমোদন পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন খাতে কত বরাদ্দ দেয়া হবে, তা নিয়ে এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে আগামী এডিপি চূড়ান্ত করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থমন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকার উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার চাপ রয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পাওয়ায় গতি বেড়েছে উন্নয়ন কাজের। এসব কারণে বেশি খরচের লক্ষ্য নিয়ে নতুন এডিপি সাজানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত এডিপি হবে সম্প্রসারণমূলক।’
নতুন এডিপিতে বরাবরের মতো এবারও নিজস্ব সম্পদের অংশ বেশি থাকছে। এর পরিমাণ ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা, বা মোট বরাদ্দের ৬২ শতাংশ। বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকার জোগান আসবে বিদেশি উৎস থেকে, যা এডিপির ৩৮ শতাংশ।
নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য আর বরাদ্দ লাগবে না বলে জানা গেছে। কারণ, আগামী জুন মাসেই সেতু খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়বে।
এ ছাড়া খাতভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে বরাবরের মতো এবারও পরিবহন ও যোগাযোগে বেশি বরাদ্দ থাকছে। এ খাতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫৬ হাজার কোটি টাকা।
বরাদ্দের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। শিক্ষা খাত বরাদ্দ পাচ্ছে ২৯ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। সম্পদের
সীমাবদ্ধতার কারণে মূল এডিপি থেকে ৮ শতাংশ কাঁটছাঁট করে সংশোধিত এডিপি
নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা। দেশীয় অর্থ অপরিবর্তীত রেখে
বিদেশি সহায়তার অংশ কমিয়ে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত করা হয়, যা গত মার্চে
অনুমোদন পায়।
ইতিমধ্যে এডিপির মাধ্যমে প্রকল্পে বরাদ্দের ক্ষেত্রে ৫২ দফা নির্দেশনা জারি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো, যেসব প্রকল্প আগামী অর্থবছরে শেষ হবে, সেসব প্রকল্পে অগ্রাধিকারমূলক বরাদ্দ মিলবে। জাতীয় স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প তুলনামূলকভাবে কম বরাদ্দ পাবে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রকল্প বাস্তবায়ন গতানুগতিক ধারায় আছে। গত জুলাই-মার্চ সময়ে সংশোধিত এডিপির ৪৫ শতাংশের মতো বাস্তবায়ন হয়েছে। খরচ হয়েছে ৯৮ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা।