রাজশাহী নগরে এটিএম বুথে মিলছে সুপেয় পানি। প্রতি লিটার পানির দাম ৮০ পয়সা। নগরের লক্ষ্মীপুর মোড়ে এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: অনেক আগে থেকেই এই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা বলে আসছেন, ওয়াসার পানি পানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এরপরও সম্প্রতি পানির দাম তিন গুণ বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। উপায় না পেয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই এই পানিই পান করছেন নগরবাসী। এই সংকট থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলল তাঁদের। নগরে বসেছে সুপেয় পানির এটিএম বুথ।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এই সেবার উদ্বোধন করেন। নগরে আপাতত লক্ষ্মীপুর মোড়, এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান, বহরমপুর মোড় ও শাহ মখদুম দরগার সামনে বিশুদ্ধ পানির বুথ স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বুথ আরও বাড়ানো হবে। বুথে ৮০ পয়সায় পাওয়া যাচ্ছে ১ লিটার পানি।

জিআইজেডের অর্থায়নে রাজশাহী সিটি করপোরেশন ও ইকলি এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। আর পানি বিশুদ্ধকরণ ও ব্যবস্থাপনা করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ড্রিংকওয়েল। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, খুলনা, মানিকগঞ্জেও এটিএম বুথের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ উদ্যোগ ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

এসব পানির বুথ থেকে ঢাকা শহরে প্রতি লিটার পানি পাওয়া যায় ৪০ পয়সায়। চট্টগ্রামে পাওয়া যায় ৬০ পয়সায়। সে হিসাবে রাজশাহীর পানির দামটা বেশি। এর ব্যাখ্যা দিলেন ড্রিংকওয়েলের বিজনেস, অপারেশন ও বিলিং বিভাগের এক্সিকিউটিভ রাহাত।  তিনি বলেন, ঢাকায় চার বছরের যে চুক্তিতে বুথ থেকে পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা শেষের দিকে। দ্রুতই পানির দাম সমন্বয় করা হবে।

আজ রোববার সকাল থেকে কয়েকটি বুথে গিয়ে দেখা যায়, বুথসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লোকজনকে বোঝাচ্ছেন, কীভাবে তাঁরা এই পানিসেবা পেতে পারেন। এই সেবা পাওয়ার জন্য ভোক্তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি, এক কপি নিজের ছবি নিয়ে আসতে হবে। শুরুতে ১০০ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন ফি ও এটিএম কার্ড বাবদ নেওয়া হয় ৫০ টাকা। বাকি ৫০ টাকা ওই কার্ডে রিচার্জ করে দেওয়া হয়। এটিএম কার্ড প্রবেশ করানোর সঙ্গে সঙ্গেই টেপ দিয়ে বের হয়ে আসে পানি। প্রতি লিটার ৮০ পয়সা দাম কাটা হয়। টাকা ফুরিয়ে গেলে বুথেই রিচার্জ করা হয়।

রাজশাহী নগরে এটিএম বুথে মিলছে সুপেয় পানি। প্রতি লিটার পানির দাম ৮০ পয়সা। নগরের লক্ষ্মীপুর মোড়ে এলাকায়

প্রতিটি বুথের সামনে রাখা হয়েছে বিনা মূল্যে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। নগরের বিভিন্ন অফিসে ২০ লিটার জারের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহকৃত পানিতে ভোক্তাদের যেখানে খরচ হয় ৫০ টাকা, সেখানে এই বুথ থেকে পানি নিলে খরচ পড়বে মাত্র ১৬ টাকা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকবে বুথগুলো।

একেবারেই শুরুর দিকে হওয়ায় রাজশাহী নগরে বুথে পানির খবর এখনো প্রচার পায়নি। ফলে বুথগুলোতেও তেমন ভিড় নেই। নগরের শাহ মখদুম দরগার সামনে বুথে দায়িত্বপ্রাপ্ত বুথ ব্যবস্থাপক রাফিউল ইসলাম বলেন, লোকজন জানেন না আর রমজান মাস, এ কারণে একটু কম রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। অনেকে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ছবিও আনছেন না।

এই বুথ থেকে নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি রোববার সকালে নিবন্ধন করেছেন। তিনি বলেন, নগরে সুপেয় পানির সংকট আছে। ওয়াসার পানিতেও সমস্যা রয়েছে। রাজশাহীর পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রনও রয়েছে। এই সেবা পেয়ে তাঁরা উপকৃত হবেন।

নগরের বহরমপুর মোড়ে রেজিস্ট্রেশনকারী মজিবুর রহমান বলেন, তিনি আজ রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাঁর বাড়ি এখানেই। ইফতারের আগে পাত্র নিয়ে এসে পানি নেবেন। তিনি আরও বলেন, এই সেবার কারণে তাঁরা ধরে নিয়েছেন, এখন থেকে বিশুদ্ধ পানি পাবেন। না ফুটিয়ে সরাসরি পানি করতে পারবেন। মান ঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিতে এই পানিও মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করার দরকার বলে মনে করেন মজিবুর।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে আজ রোববার বেলা ১টা পর্যন্ত ৫৬ জন এটিএম বুথে পানিসেবা পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর মধ্যে শাহ মখদুম দরগার সামনের বুথে ২০ জন, বহরমপুর মোড়ে ১২, এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানের সামনে ৮, নগরের লক্ষ্মীপুর মোড়ে ১৬ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন।

উদ্বোধনকালে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন গতকাল শনিবার বলেন, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়, নামেমাত্র নগরবাসীকে স্বল্প মূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা তাঁদের লক্ষ্য। এটিএম বুথে সফলতা পাওয়া গেলে নগরে আরও এ রকম পানির বুথ স্থাপন করা হবে।

ইকলির সিটি প্রকল্প কর্মকর্তা আবদুল্লাহ-আল কাফি বলেন, এই সেবা বাণিজ্যিক কারণে নয়। তাঁরা মূলত নগরবাসীকে নামমাত্র মূল্যে পানিসেবা দিতে চান। ভবিষ্যতে এই সেবার পরিধি আরও বাড়াতে চান তাঁরা।

আবদুল্লাহ-আল কাফি আরও বলেন, রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই সেবার কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো চুক্তিও হয়নি। চারটি বুথের মধ্যে শুধু শাহ মখদুম দরগার সামনে স্থাপিত বুথে ওয়াসার পানি পরিশোধন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি ও বিল পরিশোধ সাপেক্ষে পানি নেওয়া হচ্ছে। বাকি তিনটি চলছে সাবমার্সিবল পাম্পে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রাজশাহী ওয়াসা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর থেকে সরাসরি সংগ্রহকৃত পানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তিনটি স্তরে ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে বিশুদ্ধ করা হয়। পরে এই পানি খাওয়ার জন্য উপযুক্ত করে ভোক্তাদের দেওয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের বিষয়টি দ্রুতই নগরবাসীকে জানানো হবে। বলা হচ্ছে, এই সেবা নগরবাসীকে দিতে পারলে অনেক ধরনের পেটের পীড়াজনিত সমস্যা কেটে যাবে।