জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন ডেনিশ রাজকুমারী মেরি এলিজাবেথ। বুধবার সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কুলতলী গ্রামে  | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:  জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতের শিকার জনগোষ্ঠী নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের জন্য তাঁদের প্রশংসা করেছেন ডেনমার্কের রাজকুমারী মেরি এলিজাবেথ। বুধবার বেলা ১১টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কুলতলী গ্রাম পরিদর্শনে এসে তিনি এই প্রতিক্রিয়া জানান।

সেই সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টায় প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাঁদের জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, সে বিষয়েও খোঁজখবর নেন রাজকুমারী।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে মেরি এলিজাবেথ শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মাঠে হেলিকপ্টারে করে অবতরণ করেন। এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সড়কপথে সুন্দরবন তীরবর্তী কুলতলী গ্রামে পৌঁছান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এসট্রাপ পিটারসেন, ডেপুটি রাষ্ট্রদূত লেনি ভলকারসেনসহ ডেনমার্ক দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

ডেনিশ রাজকুমারী সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলবর্তী গ্রাম ঘুরে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের (সিএনআরএস) বাস্তবায়নাধীন গভর্ন্যান্স ফর কোস্টাল রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। লবণাক্ততা বাড়ায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পেলেও খাল খননের মাধ্যমে মিষ্টি পানি সংরক্ষণ করে সবজিসহ কৃষি ফসল চাষ করে উপকূলীয় নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার ঘটনাকে তিনি অনুকরণীয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

কুলতলী গ্রাম পরিদর্শনকালে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের শিকার পুষ্প রানী মণ্ডল, শিলা রানী, টুম্পা মণ্ডল, আরতী বালা ও হেমলতা মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলেন ডেনিশ রাজকুমারী। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুনে তিনি বিস্মিত হন। কুলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেন তিনি। 

ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেটা কীভাবে ব্যবহার করা হয়, কত জন মানুষ সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন, সেখানকার সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিষয়ে ধারণা নেন মেরি এলিজাবেথ। এরপর তিনি বুড়িগোয়ালিনীর ভাঙনকবলিত দাতিনাখালী এলাকার উপকূল রক্ষা বাঁধ হেঁটে পরিদর্শন করেন। ভাঙনের শিকার কয়েকটি পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

বেলা দুইটার দিকে মুন্সিগঞ্জের কলবাড়ী এলাকায় একটি রিসোর্ট সেন্টারে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন রাজকুমারী মেরি। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। সেখানে সুন্দরবনের কিছুটা অংশ ঘুরে দেখেন। পরে সুন্দরবনের কলাগাছিয়া পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে মুন্সিগঞ্জ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট মাঠে পৌঁছে আবার হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদেশে শ্যামনগর ত্যাগ করেন।