পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও দোকানে বাহারি ইফতারসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক:  চকবাজারের রাস্তায় আবার সেই চেনা দৃশ্য ফিরল দুই বছরের দুঃসময়ের পর।  রোববার পয়লা রমজানে পুরান ঢাকার চকবাজার জামে মসজিদের সামনের সড়কের এমাথা–ওমাথা ভরে উঠেছিল হরেক রকমের কাবাব, কোফতা, রোস্ট, পরোটা, তন্দুরি, ফুলুরি, পেঁয়াজু, বেগুনি, হালুয়া, শরবতের মতো শতেক পদের উপাদেয় খাদ্যের সম্ভারে। চৈত্রের ঝাঁজালো বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছিল তার ঘ্রাণ। তবে দাম বেশ চড়া।

প্রথম রোজায় চকবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বিক্রেতারা তাঁদের পসরা সাজিয়েছেন। করোনা অতিমারির কারণে গত দুই বছর চকের এ ইফতারির বাজার সেভাবে বসেনি। বাজার বসবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল এবারও। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা, সাংসদের প্রতিনিধিরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ইফতারির বাজার বসানোর ব্যবস্থা করেন। বেলা তিনটা থেকে উর্দু রোড মোড় থেকে চক মসজিদের সামনের সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ করে ইফতারির পসরা বসে যায়।

রান্না ছোলা আর কাবলি ছোলার ঘুগনি

চকবাজারের এ ইফতারির বাজারের ঐতিহ্য দীর্ঘকালের। ঢাকার খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে চকের ইফতারির বাজার অনন্য উপাদান হিসেবে জুড়ে আছে। হাকিম হাবীবুর রহমান তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ঢাকা: পাচাস্ বারস পহলেতে (এটি অধুনা বাংলায় অনুবাদ করেছেন ড. মোহাম্মদ রেজাউল করিম, ঢাকা: পঞ্চাশ বছর আগে নামে) চকের ইফতারির বাজার ও সে কালের ঢাকায় ইফতারির খাদ্য–পানীয়ের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘চকে ইফতারির দোকান বসত, ধনী–গরিব সবাই চকে আসত এবং তিন প্রহরে বেশ ভালো মেলা জমে যেত। প্রত্যেক ব্যক্তিই চক থেকে কিছু না কিছু আনত।’

চৈত্রের গরমে চাহিদা ছিল মাঠারও

চকের ইফতারির খ্যাতি তার বহু ধরনের কাবাব ও গোশতের পদগুলোর জন্য। লম্বা শিকের সঙ্গে সুতা দিয়ে বিশেষ কায়দায় পেঁচিয়ে তৈরি করা সুতি কাবাব তো ইফতারিতে খুবই জনপ্রিয়। মুড়ি, ঘুগনি, ছোলা প্রভৃতির সঙ্গে সুতি কাবাব যোগ করে একত্রে মাখিয়ে খাওয়া হয়। এ ছাড়া কাবাবের মধ্যে আছে শিক, শামি, রেশমি, জালি, বটি, খিরি, গুর্দা, টেংরি, হান্ডি এসব। আরও আছে আস্ত মুরগি, কোয়েল ও কবুতরের রোস্ট, রেজালা, চাপ ইত্যাদি।

চকের ইফতারির বাজার তার আগের রূপে ফিরে এলেও খাবারের দাম আর আগের মতো থাকেনি। ক্রেতারা বলছেন দাম খুব চড়া। সে কথা কবুল করছেন বিক্রেতারাও। তেল, মসলা, গোশত, চিনি, সবজি সবকিছুরই দাম লাগামছাড়া। কাজেই ইফতারির দাম না বাড়িয়ে তাঁদের উপায় কী?

আস্ত মুরগির কাবাব কিনতে ক্রেতাদের ভিড়

জমজম বেকারির মালিক হাজি ওয়াহাব বাবুর্চি বললেন, রমজান মাসে তাঁরা সাধারণত দাম বাড়ান না। কিন্তু এবার যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাই কিছু কিছু খাবারের দাম বাড়াতে হয়েছে। পেয়াঁজু, বেগুনি, পাকোড়া এসব আগের মতোই প্রতিটি ৫ টাকা করে। তবে আকার একটু ছোট হয়েছে। ডিমের চপ গত বছর ছিল ৩০ টাকা, এবার ৪০ টাকা।

গরমে কারণে ইফতারিতে তরমুজের চাহিদা ছিল বাড়তি

মতিঝিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপপরিচালক আশরাফুল ইসলাম সস্ত্রীক চকবাজারে এসেছিলেন রোজার প্রথম দিনের ইফতারি কিনতে। স্ত্রী শামিমা বেগমও সরকারি চাকুরে। বিয়ের পর এবারই তাঁদের প্রথম রোজা। চকের ইফতারির খ্যাতি অনেক শুনেছেন, তাই ভয়ানক যানজট ঠেলেও এসেছিলেন ইফতারি কিনতে। দইবড়া আর কয়েক রকম কাবাব কিনেছেন। জানালেন, দাম কিছু বেশি, তবে বাজারে সবকিছুর তো এখন দাম চড়া।

বাহারি এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে এসেছেন। ঐতিহ্যবাহী খানদানি ইফতারি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা।